চট্টগ্রামে মেয়র আসে—মেয়র যায়, শেষ হয় না নগর ভবনের কাজ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন নগর ভবন নিয়ে নির্মাণ নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। দীর্ঘ ১১ বছর পার হলেও শুরু করা যায়নি ভবনের নির্মাণকাজ। অথচ ২০১০ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর আরও দুই মেয়রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে নতুন মেয়রও পার করেছেন একবছরের বেশি সময়। নতুন মেয়াদে চলতি বছরের জুনে শেষ করার কথা ছিল নির্মাণকাজ। কিন্তু কাজ যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। বর্তমানে চসিকের কার্যক্রম ভাগাভাগি করে চলছে আন্দরকিল্লার পুরনো নগর ভবন ও টাইগারপাসের বস্তিবাসীর জন্য নির্মিত ভবনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই ২০০৯ সালে নগর ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ২০১০ সালের ১১ মার্চ নগর ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন তিনি। পরে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু। এরপর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হলেও অজানা কারণে হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

২০১২ সালে নগর ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই বছরের ডিসেম্বরেই ভবন নির্মাণের মেয়াদকাল শেষ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে আরও প্রায় তিন বছর! প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি কাজ শুরু হলেও অর্থ সংকটে ফের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৫ সালে নির্বাচিত হয়ে মেয়রের দায়িত্ব নেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। মেয়র নাছিরের বহুমুখী প্রচেষ্টায় ২০২ কোটি টাকার বাজেটের নতুন নগর ভবনের নকশা প্রি-একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। পরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত করা হয়।

মেয়র নাছিরের মেয়াদকাল শেষ হতেই সিটি করপোরেশনে প্রশাসকের দায়িত্ব পান খোরশেদ আলম সুজন। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে সুজনের বিরুদ্ধে ১৩টি দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এবং নতুন নগর ভবনের কাজ থমকে যায়। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি নতুন মেয়র রেজাউল করিম ক্ষমতায় আসার এক বছরের পার হলেও এখনো কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

চসিক সূত্রে জানা যায়, সরকার আধুনিক নগর ভবন তৈরির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার বাজেট বাড়িয়ে প্রায় ২০২ কোটি টাকা করে এবং প্রি-একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়ে একনেকের সভায় উপস্থাপিত হয়। কিন্তু করোনার অতিমারির কারণে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

৩৩ হাজার ৯৫৫ বর্গফুট জায়গাজুড়ে ২০তলার নতুন নগর ভবন হবে। এই ভবনটি হবে চট্টগ্রামের আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এই ভবনে একাধিক লিফট, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নিজস্ব সাবস্টেশন, জেনারেটর এবং সোলার প্যানেল থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আধুনিক নগর ভবন তৈরির লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। নগর ভবন নির্মাণকাজ একটি মহাপ্রজেক্ট এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পিডব্লিওডি’র অবজারবেশন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সামনে প্রি-একনেকের সভা আছে, আশাকরি জটিলতা কাটিয়ে অনুমতি দেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে সাবেক মেয়র এম মঞ্জুরুল আলম বলেন, নানা বাধ্যবাধকতার মধ্যদিয়েও আমি নতুন নগর ভবনের পাইলিংয়ের কাজ শেষ করেছিলাম। কিন্তু কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে, কাজ শেষ হতেই চসিক নির্বাচন চলে আসে। পরবর্তী মেয়ররা কাজ শুরু করার প্রস্তুতির পরও এখনও আগের অবস্থানে রয়ে গেছে।

জানতে চাইলে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নতুন নগর ভবন নির্মাণ একটি মেগা প্রজেক্ট। নানা জটিলতা কাটিয়ে আমার সময়কালীন প্রি-একনেকে অনুমতি পায়, অগ্রগতিও ভালো ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সরকার মেগা প্রজেক্টের কাজ স্থগিত করে। এরপর আমার মেয়াদকাল শেষ হওয়াতে অগ্রগতি স্থবির হয়ে যায়। আমার পরে যিনি দায়িত্বে এসেছেন তিনি এতদিন কেন অনুমোদন নিতে পারছেন না তা ওনিই ভালো বলতে পারবেন।

সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে চলতি বছরের শেষে কাজে অগ্রগতি আসবে জানিয়ে চসিক মেয়র রেজাউল করিম বলেন, এতদিন এই প্রকল্পের কাজ পিডব্লিওডির অবজারভেশনে ছিল। এখন প্রকল্পটির কাজ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আছে। সামনে প্রি-একনেকের সভা আছে। সেখানে পাস হলে এই বছরের শেষে কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে টাইগারপাসের যে ভবনে চসিকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেটা উপযুক্ত না। সবকিছু ঠিক থাকলে আমার মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করে নগরবাসীকে নতুন নগর ভবন উপহার দেব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!