মফিজুর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুবাইদা বেগম ঘটক হিসেবে কাজ করেন। তারা দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়াসহ আশপাশের এলাকার গরিব ও নিরীহ বিবাহযোগ্য মেয়েদের অভিভাবকের সঙ্গে বিয়ের কথা বলে ছবি সংগ্রহ করেন। পরে বিবাহযোগ্য মেয়েদের সঙ্গে পাত্রের মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলার অজুহাতে নম্বর নিয়ে নেন। মেয়েদের মোবাইল নাম্বার নেয় সুকৌশলে। এরপর পাত্রের ভাই-ভাবী সেজে মুঠোফোনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
এভাবে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা বলেন, মেয়ের শরীরে কোনো দাগ বা তিল থাকতে পারবে না। গায়ে এমন কোনো কিছু নেই তা প্রমাণে বিবাহযোগ্য মেয়েরা মফিজুর-জুবাইদার কাছে আসলে তারা সুকৌশলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নেয়। এরপর শুরু হয় প্রতারণা। এভাবে তারা গরিব-অসহায় মেয়েদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
বুধবার (১০ জুলাই) মধ্যরাত সাড়ে ৩টার দিকে সাতকানিয়া থেকে প্রতারক মফিজুর রহমান (৫৬) ও তার ২য় স্ত্রী জুবায়দা বেগমকে (৩০) গ্রেপ্তার করে পটিয়ার পুলিশ। তাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার জালিয়াখালী এলাকায় হলেও তারা থাকতেন সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়নের বড়দুয়ারা খৈয়াখালী। এর আগে ৯ জুলাই এক ভুক্তভোগী মেয়ে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন পটিয়া থানায়।
আসামিদের কাছ থেকে একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন উদ্বার করা হয়। ওই মোবাইলে বেশ কিছু তরুণীর নগ্ন ছবি পাওয়া গেছে।
আরও জানা গেছে, ভিডিও ধারণের পর শুরুতে অসহায় মেয়ের পরিবারের কাছে অল্প টাকা দাবি করে তারা। তা নাহলে পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হবে না বলে হুমকি দেয়। প্রথম ধাপে টাকা পাওয়ার পর কিছুদিন চুপ থাকে। এরপর নগ্ন ছবির কথা বলে আবারও টাকা চাওয়া হয় মেয়েদের কাছ থেকে। এভাবে কয়েক দফায় তারা টাকা আদায় করে অসহায় মেয়েদের কাছ থেকে। আর টাকা না দিলে বিয়ে ভেঙে দেওয়াসহ নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমমি দেওয়া হয়।
এদিকে থানায় দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগীর বাবা উল্লেখ করেন, প্রতারকরা তার বিবাহযোগ্য মেয়ের নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে যে, এভাবে প্রত্যেক মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে নগ্ন ছবির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে তারা। শরীরে তিল বা দাগ নেই, এমনটি প্রমাণ করতে এলে কৌশলে মেয়েদের নগ্ন করে ছবি ও ভিডিও করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আসামিদের পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, এতদিন লাজ-লজ্জার ভয়ে ভিকটিমের পরিবার থানা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। প্রতারকদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইলে থাকা নগ্ন ছবিগুলোর মধ্যে পটিয়া থানায় অভিযোগ দেওয়া ভুক্তভোগীর মেয়ের অনেকগুলি নগ্ন ছবি সংরক্ষিত ছিল। এভাবে প্রতারক স্বামী-স্ত্রী মিলে গ্রামের সহজ সরল মেয়েদের বিয়ের কথা বলে নগ্ন ছবি তোলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, এভাবে এ প্রতারক স্বামী-স্ত্রী মিলে শত শত বিবাহযোগ্য মেয়ে ও তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এতোদিন কোনো অভিভাবক তাদের সম্মানের ভয়ে থানায় অভিযোগ করেননি। বুধবার এক অভিভাবক তার মেয়েকে নিয়ে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযানে নেমে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
ডিজে