ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকঢোল পিটিয়ে গত ২২ জুন ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। মশা উৎপাদনের ৫৭টি হটস্পটসহ ৪১টি ওয়ার্ডে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করার কথা জানায় সিটি কর্পোরেশন। দুই মাসের বেশি সময় ধরে মশা নিধনে ওষুধ ছিটিয়ে আসছে বলে দাবি করছে সংস্থাটি। সেই হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসার কথা। কিন্তু মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার পর দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এর মধ্যে ৮ গুণ বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও আগের যে কোনো বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে।
ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু না হওয়ার আগে মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩২। ওই মাসে মৃত্যুর কোনো ঘটনা ছিল না। এরপর ২২ জুন থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। ওই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০২ ও মৃত্যু হয় ৬ জনের। ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরুর পর জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১ হাজার ৬৮৮ জন ও মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ জনে। অথচ গত বছরের জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৬৪ জন।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে, আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৭ ও মৃত্যু হয় ২৮ জনের। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয় ১৪৩৬ জন ও মৃত্যু হয় ৯ জনের।
সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার পর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে আট গুণের বেশি, মৃত্যুও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, মশা নিধন কার্যক্রম না করলে ৮ গুণের জায়গায় ১৬ গুণ বাড়তো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ও মৃত্যু হওয়া রোগীদের অধিকাংশই সরকারি হিসেবে থাকে না।
এদিকে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ করে মশার প্রজনন স্থান খুঁজতে ড্রোন উড়িয়েছে সংস্থাটি। অথচ ক্রাশ প্রোগ্রামের কার্যকর কোনো সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
নগরবাসী বলছে, ক্রাশ প্রোগ্রাম মূলত ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ। লোকদেখানো এসব প্রোগ্রাম জনগণের টাকা তসরুপ ছাড়া আর কিছুই না।
মেয়র রেজাউলের ফেসবুক পেইজের এক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে নগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা শহীদ খান লেখেন, ‘মাননীয় মেয়র সাব, চট্টগ্রামের প্রতিটি হসপিটালের কোন বেড খালি নাই। সব হসপিটালে ডেঙ্গু রোগীরা ভর্তি। চট্টগ্রাম শহরের অলিগলির নালাগুলোতে মশা নিধনের ব্যবস্থা করেন। যার ফলে নগরবাসী ডেঙ্গু রোগের হাহাকার থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাবে।’
সচেতন নাগরিক কমিটির মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তার কবির চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনের নামে ভাওতাবাজি করছে। ফগার মেশিন আওয়াজ ও কালো তেলের ধোঁয়া দিয়ে নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা করছে তারা। এসবের কারণে মশা মরা তো দূরের কথা, উল্টো বাড়ছে।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘১০০ জনের বিশেষ টিম প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। সিটি কর্পোরেশন ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু না করলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখনের চেয়ে দ্বিগুণ হতো। অনিয়মিত বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ মশার প্রজননক্ষেত্র বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। তবে উত্তর কোরিয়া ও কলকাতার মতো দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজের ধারাবাহিকতা থাকলে সুফল আসবে।’
ডিজে