চট্টগ্রামে মশা মরে না ফগার মেশিনে, উড়ন্ত মশায় অকার্যকর ৫ ওষুধ

গবেষণায় বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এতোদিন ধরে ফগার মেশিন দিয়ে ছিটিয়েই যাচ্ছিল ‘মশা নিধনের ওষুধ’। অথচ নগরবাসীর নিত্য অভিযোগ, মশার অত্যাচারে তারা অতিষ্ট। কেন অতিষ্ট— এই কারণ যাচাই না করেই সিটি কর্পোরেশন একের পর এক উচ্চমূল্যে কিনে যাচ্ছিল ফগার মেশিন। শুধু তাই নয়, মাত্র চার মাস আগে চারটি ফগার মেশিন রহস্যজনকভাবে ‘নষ্ট’ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে চসিকে। এগুলোর একেকটির দাম পড়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। বছরের পর বছর এই ফগার মেশিনের ধোঁয়া উড়িয়েও মশা কেন মরে না— এ নিয়ে নগরবাসী প্রশ্ন তুলে যাচ্ছিলেন বরাবরই।

এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক রীতিমতো হাতেকলমে পরীক্ষা করে জানালেন, চট্টগ্রাম নগরীর মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ফগার মেশিনে ব্যবহৃত ওষুধে মশাই মরে না। এক্ষেত্রে উড়ন্ত মশা ও লার্ভা ধ্বংস করতে চসিককে স্প্রের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানোর পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২ টার দিকে গবেষক দল চসিক মেয়র রেজাউল করিমের কাছে এ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন জমা দেন।

এ সময়ই মেয়র বলেন, ফগার মেশিন দিয়ে এতো ওষুধ ছিটানোর পরও নগরবাসীরা বলেন মশার কামড়ে অতিষ্ট। অথচ একটি স্প্রে মেশিনের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি দাম ফগার মেশিনের। এই মেশিনের বদলে যে স্প্রে মেশিন ব্যবহার করতাম, তা নিয়ে এগিয়ে গেলে অনেক বেশি সুফল পাব। স্প্রে মেশিন সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করি। ফগার মেশিন দিয়ে যে ওষুধ ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা নগণ্য। লার্ভিসাইড এডাল্টিসাইড মেশিন দিয়ে ওষুধ স্প্রে করলে বেশি সুফল পাব।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে ফগার মেশিন রয়েছে ১০০টি। এর মধ্যে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সময়ে কেনা হয় ৯০টি ফগার মেশিন। এগুলোর একেকটির দাম পড়েছে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে। এর মধ্যে মাত্র চার মাস আগে চারটিসহ মোট ১১টি ফগার মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, এক লিটার কেরোসিনে সর্বোচ্চ মাত্রার ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার অ্যাডাল্টিসাইড ফগার মেশিন দিয়ে ছিটানো হলে মশা মারা যায় মাত্র ১৪ শতাংশ। ২০০টি মশার ওপর এ কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে একই মাত্রার কীটনাশক স্প্রে মেশিনে ছিটানো হলে মশা নিধন হয় শতভাগ। তবে এ মাত্রার ওষুধ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তাই সিটি করপোরেশন ব্যবহার করে না। এছাড়া এক লিটার কেরোসিনে সর্বোচ্চ মাত্রার ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার লার্ভিসাইড স্প্রে মেশিন দিয়ে মিশিয়ে শতভাগ ফল পাওয়া যায়।

এদিকে গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের পাঁচটা ওষুধের নমুনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বাকি তিনটি নতুন। যে ওষুধটা শতভাগ কার্যকরী সেটা হারবাল জাতীয়। এটা পরিবেশের জন্য উপযোগী। আমাদের গবেষণায় নতুন তিনটার মধ্যে একটা ওষুধ লার্ভা ও উড়ন্ত মশার ক্ষেত্রে শতভাগ কাজ করেছে। উড়ন্ত মশার ক্ষেত্রে পাঁচটার একটাও কোন কার্যকর হয় না।’

চসিক মেয়র রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন আমরা আশ্বস্ত হতে পেরেছি কোন ওষুধ ব্যবহার করলে মশা মারতে পারব। আগে বছরের পর বছর মশার ওষুধ ব্যবহার করেছি কিন্তু আন্দাজে ব্যবহার করেছি। হয়তো কখনো বেশি ওষুধ ব্যবহার করেছি, কখনো কম ব্যবহার করেছি। পুরোপুরি সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ে সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৬ জন শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

সিটি কর্পোরেশন গবেষণার জন্য বাজেট অনুমোদন দেওয়ার পর গত ৫ জুলাই থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে গবেষক দল। তারা টানা ২৫ দিন ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করে নগরীর ৫১টি ও হাটহাজারীর ৬টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে। এতে ১৫টি স্পটে মিলেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস। বিভিন্ন এলাকার বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ার এবং রাস্তার ধারে পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিলেছে এডিস মশার এসব লার্ভার উপস্থিতি। এসব এলাকা থেকে সংগৃহীত লার্ভার শতভাগই ছিল এডিসের।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm