চট্টগ্রামে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। অন্যদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে বর্ষার শেষ মৌসুমে বিপজ্জনক হারে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হতে শুরু করেছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবের খাতায় উঠেছে ১৫ জন রোগীর নাম। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা বাড়ার আশংকা রয়েছে বহুগুণেই। এক সঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশংকা দেখা দেওয়ায় উদ্বেগও বেড়েছে নগরজুড়ে।
সংশ্লিষ্টদের ‘ফোকাস’ এখনো করোনা মহামারির দিকে থাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন অভিযান এখনো শুরু হয়নি কার্যকরভাবে। এখন থেকে আগাম প্রস্তুতি না নিলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে ডেঙ্গু- এমন আশংকা করছে নগরবাসী।
জানা গেছে, গত এক মাসে চট্টগ্রামে সরকারিভাবে ১৫ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১ জন এবং হাটহাজারী উপজেলায় ১ জন রোগী শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডের অলিতে-গলিতে ছোট ছোট গর্তে জমে আছে পানি। ড্রেনে দেখা যায় ময়লা জমে থাকতে। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মশা নিধন কীটনাশক ছিটানোর কাজ শুরু করলেও ৯০শতাংশ এলাকায় এখনও কাজ শুরু করেননি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। যার কারণে অতিরিক্ত হারে মশার প্রজনন বাড়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত বছর সদ্য বিদায়ী সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়ী করেছিল নগরবাসী। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলে বর্তমান সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এ ইস্যুতে বিদায়ী মেয়রের পথেই হাটছেন কি-না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো ‘কার্যকর’ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
দেওয়ানহাট মীরবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও যে হারে মশার উপদ্রব বাড়তে শুরু করেছে দিনের বেলায়ও কয়েল ছাড়া থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এইদিকে দ্বিতীয় ধাপে করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। সবাই করোনার আতঙ্কে রয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু হানা দিতে শুরু করেছে। এখন থেকে ডেঙ্গু মোকাবেলায় কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের কোন ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।’
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা অনিক বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মশার অতিষ্ঠে ঘুমানো যাচ্ছে না। দিনে হাঁটার সময়ও মশা কামড়াচ্ছে। দিন-রাত কয়েল জ্বালিয়েও বাঁচা যাচ্ছে না। ড্রেন ও অলিতে-গলিতে ময়লার স্তুপ জমে থাকাতে মশার প্রজনন বাড়ছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কাউকে দেখছি না। কারো মাথা ব্যাথাও নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন থেকে পদক্ষেপ না নিলে করুণ পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরুল হায়দার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত এক মাসে সর্বমোট ১৫ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ১৩ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১জন এবং নগরের বাইরে হাটহাজারী উপজেলায় ১ জন শনাক্তের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই এখনো করোনা আতঙ্কে থাকায় আলাদা ভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছে না। আমাদের সবার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আগে নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যেন মশা নিধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হয়েছে। আসলে বর্ষাকাল হচ্ছে ডেঙ্গুর মৌসুম। বর্ষা মৌসুমে দেখা না দিলেও শেষ পর্যায়ে দেখা দিচ্ছে। ভয়ের কিছু নেই। আমরা প্রত্যেক উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গুর কীট পাঠিয়ে দিয়েছি। কেউ জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসলে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু টেস্টও করাতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন নগরীর সব জায়গা পরিষ্কার রাখে এবং যেন কীটনাশক ছিটায়। তারা কাজ শুরু করে দিছে ইতিমধ্যে। আশা করি ভয়াবহ কিছু হবে না।’
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশন প্রশাসক সুজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা গত শুক্রবার থেকে নগরীর অলিতে-গলিতে পরিষ্কার ও মশা নিধনে কীটনাশক ছিটানোর কাজ শুরু করেছি। এছাড়া কোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলে আমাদের সাথে সাথে জানাতে বলা হয়েছে। যে এলাকাতে ডেঙ্গু শনাক্ত হবে সেখানে আমরা আলাদাভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
এমএফও