চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মেখল পুণ্ডরীক ধামের লক্ষ্মী জনার্দন সরোবর ও চলাচলের পথ জবরদখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলালের বিরুদ্ধে।
রোববার (১৮ জুন) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
এই সময় ইসকনের পক্ষে সাত দফা দাবি তুলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুণ্ডরীক ধামের জায়গা দখলের চেষ্টা করা হলে কিংবা কোনোরকম ষড়যন্ত্র করা হলে সারাদেশের হিন্দুরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। শুধু দেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের হিন্দুরা এই পবিত্রভূমি রক্ষায় মাঠে নামবে।’
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘পুণ্ডরীক ধাম এলাকায় মূল ফটকের বাইরের দিকে পশ্চিম পাশে ধামের তিনতলা ভবন সংলগ্ন লক্ষ্মী জনার্দন সরোবর এবং তৎসংলগ্ন ধামের অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য সরোবর ঘিরে সুপ্রশস্ত চলাচলের পথ রয়েছে এবং ১২১ শতক পরিমাপের দুটি পুকুর যা লক্ষ্মী জনার্দন সরোবর নামে পরিচিত। এই পুকুর দুটি ও চলাচলের রাস্তা আরএস খতিয়ানের মালিকানা কলাম এককভাবে লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহ তৎপক্ষে সেবায়েত হর কুমার স্মৃতি তীর্থ-এর নামে আরএস জরিপ চূড়ান্ত রেকর্ড ও প্রচার আছে। যা চিরস্থায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে স্থানীয় সকলে অবগত আছেন।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলাল বিভিন্ন সময় বিএস খতিয়ানে তাদের নাম আছে বলে লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের সম্পত্তি দাবি করেন। একপর্যায়ে দলবল নিয়ে মন্দিরের চলাচলের রাস্তায় ওপর দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা করা হলে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মীর নাছির বিভিন্নভাবে মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে এই ঘটনায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি মহানগর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে মন্দিরের জায়গা দখল করে সেবায়েতদের চলাচলের পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে এলাকায় অরাজকতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাইছে। হিন্দু তীর্থক্ষেত্র পুণ্ডরীক ধামের জায়গা-জমির ওপর কেন বিএনপি নেতাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের নানা হুমকির কারণে ধামের সাধুরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা সাধু-সন্ন্যাসীদের চরিত্র হনন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাক করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টসহ শ্রীধামের ক্ষতিসাধনে তৎপর রয়েছে। ভুয়া দলিল বানিয়ে মন্দিরের জায়গা জবরদখলের চেষ্টা করছে। লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি, যা কখনো হস্তান্তরযোগ্য নয়। আরএস খতিয়ানেও এই সম্পত্তি লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহের নামে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিএস খতিয়ানে তার ধারাবাহিকতা না থাকার সুযোগ নিয়ে তারা নিজেদের নামে জাল দলিল তৈরি করে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
পুণ্ডরীক ধাম নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করে হাটহাজারীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে ইসকন।