চট্টগ্রামে ভাষার দুর্দশা সাইনবোর্ড ব্যানার পোস্টারে

চট্টগ্রামে ইচ্ছেমাফিক বানানে লেখা হচ্ছে ‘সাইনবোর্ড’। দোকানের নামফলকে একই শব্দ লেখা হচ্ছে একেকভাবে। এতে একদিকে যেমন বাংলাভাষার বিকৃতি ঘটছে, তেমনি শিশুর ভাষা বিকাশেও ঘটছে ত্রুটি— এমনই অভিমত ভাষাবিশেষজ্ঞদের। ব্যানার কিংবা পোস্টারেও বাংলা বানানের একই দুর্দশা চোখে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ভুলের সেই বহর ক্রমশ বাড়ছেই।

যানবাহনগুলোর পেছনে নানান ধরনের উপদেশমূলক বাণী লেখা থাকে। প্রায়ই চোখে পড়ে ভুল বানানে লেখা উপদেশবাণী। ছোট-বড় দোকানেও হরহামেশা চোখে পড়ে ভুল বানান। অবশ্য চট্টগ্রামে সাইনবোর্ড ও দেয়াল লিখনের কাজ যারা করে তাদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত কিংবা স্বল্পশিক্ষিত। ফলে তারা যখন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামফলক, ব্যানার ও দেয়াললিখনের কাজ করে থাকেন, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বাংলা বানানের ভুল বেশি থাকে।

নগরীর আসকারদীঘি পাড়ের ফার্নিচারের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, ‘ফার্নিচার’ শব্দটিই একেক দোকানে লেখা আছে একেকরকম। যেমন— মদিনা ফার্নিসারস, প্যারামাইন্ট ফার্নিশার্স, হোম ফার্নিষার্স। আন্দরকিল্লার এক দোকানের নামফলকে লেখা আছে ‘কল্লোল ষ্টেশনার্স’। নামফলকে ভুল বানানের ছড়াছড়ি দেখা গেছে আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চকবাজারসহ পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতেও।

নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের মোটর পার্টসের বেশিরভাগ দোকানেরই সাইনবোর্ড ভুলে ভরা। ওই এলাকার ফাতেমা অটোমোবাইলসের সাইনবোর্ডে লেখা আছে— ‘এহানে মুবিল, গিরিজ, পিট্রোল (এখানে মবিল, গ্রিজ, পেট্রোল) পাওয়া যায়।’ রহমান অটোমোবাইলসের জায়গায় লেখা আছে— ‘রয়মান অটোমোবাইল’।

একই এলাকায় মোবাইলের দোকানের সাইনবোর্ডে দেখা গেছে— ‘সেলিম ইন্টারপ্রাইজ। এখান থেকে ফিলিক্স লোড, এজি লোড করা হয়। মোবাইল টু মবেল ২ টাকা। বিকাষ করা হয়।’

শেখ মুজিব রোড পার হয়ে চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারের দোকানগুলোতেও দেখা গেল ‘মেশার্স দুলাল মিয় ষ্টোর’, ‘বেলাল ফারমাসি’, ‘স্বর্ণা জুয়েরলার্স’, ‘লিটন ট্রিডার্স’সহ ভুলে ভরা বিভিন্ন সাইনবোর্ড। একই এলাকার হাজিপাড়ার বাড়ি ভাড়ার সাইনবোর্ডে দেখা গেছে— ‘মফিজ মুন্সির গলিতে এখানে ঘোর (ঘর) ভারা (ভাড়া) দেয়া হবে। পানি, গস (গ্যাস) সুবিধাসহ।’ ছাত্রাবাসগুলোর সাইনবোর্ডে লেখা আছে— ‘মেছ ভাড়া দেয়া হবে।’

এসব এলাকা ছেড়ে জামালখান ডাক্তারপাড়ার সাইনবোর্ডেও দেখা গেছে ভুলে ভরা বানান। ডাক্তারের নাম, ডিগ্রি, চেম্বারের নামেও পাওয়া গেছে ভুল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে দেখা গেছে ভুল। চকবাজারে ফুলতলা বাজারের কাছে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেসিডেন্সিয়ালের জায়গায় লেখা আছে ‘রসিডেনটিশিয়াল।’

সাইনবোর্ডের ভুল বানানের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে যারা সাইনবোর্ড লেখার কাজ করে থাকেন, তাদের অনেকেই প্রাইমারির গণ্ডি পেরোননি। এরা ব্যানার, সাইনবোর্ড, পলিসাইন, ডিজিটাল সাইন, বেলসাইনসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকে। আন্দরকিল্লার আর্ট সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে এ দোকানের মালিক অজিত দাশের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী পাশ। আন্দরকিল্লা ডিজাইন আর্ট প্রেস, বাদল আর্ট প্রেসসহ অন্যদের অবস্থাও একই। আরেক মালিক রক্তিম দাশের দুই সহযোগীর একজন নয়ন পড়াশোনা করেছেন তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত।

নয়ন জানান, সাইনবোর্ড লেখার হাতেখড়ি হয় লিখতে লিখতে। বর্ণমালা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে এ কাজে আসা। পূবালী আর্ট প্রেসে সাইনবোর্ড লেখার কাজে যুক্ত পিযুষ জানান, তিনি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন।

এদিকে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরের সব প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান এবং বিদেশি ভাষায় লেখা দোকানের নামফলক সরিয়ে বাংলায় লিখতে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এই সময়ের পর বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষার নামফলক পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!