বিকাল সাড়ে ৫টা। অফিস শেষ করে বাসায় যাওয়ার তাড়া সবার। ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে তখন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ লাকি প্লাজার বিপরীতে এক যুবক দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। তখনই রিকশার চাকায় লেগে পড়ে যান প্রতিবেদকের মোটরসাইকেলের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৫-২০ জন যুবক এসে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন ওই যুবককে। এদের মধ্যে একজন পেছন থেকে চাপাতি বের করে পাঁচটি ঘা দেন ওই যুবককে। অন্যরা লাঠি দিয়ে মেরে ক্ষান্ত হন।
তবে এ সময় আশপাশে যারাই মোবাইলে ঘটনাটির ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন তাদেরও পিটিয়েছে হামলাকারীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগ্রাবাদ এলাকার লাকি প্লাজার বিপরীতে সাউথল্যান্ড সেন্টার নামের মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত যুবকের নাম রানা বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারীকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মারামারির কিছুক্ষণ আগে ঘটে আরও একটি মারামারি। আবার সেই মারামারির কারণ ১২ দিন আগের গণপূর্ত বিভাগের আরেকটি মারামারির ঘটনা।
মারামারির শোধ নিতে মারামারি
‘টাকার খনি’ হিসেবে পরিচিত গণপূর্তের দরপত্রের সুবিধা নিতে মরিয়া দুটি গ্রুপ। যার একটির নেতৃত্বে রয়েছেন এসএম পারভেজ, বাকি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন হাসান মজুমদার শাকিল। ৩০জুন আগ্রাবাদের গণপূর্ত কার্যালয়ের ঠিকাদারদের অফিসে হামলা চালায় কথিত যুবলীগ নেতা এসএম পারভেজের অনুসারীরা। এতে এক সরকারি কর্মকর্তাসহ মোট তিনজন গুরুতর আহন হন। এই ঘটনার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক একজন ও পরে আরও চারজনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে একজন হচ্ছেন রনি। তিনি কথিত যুবলীগ নেতা পারভেজের অনুসারী।
জেলখেটে গত পরশু বের হয়েছেন বৃহস্পতিবার হামলার শিকার রানা। জেলে কেন যেতে হলো—সেই শোধ নিতে সাউথল্যান্ড মার্কেটের পেছনে মৌলভী পাড়ার একটি খেলার মাঠে খেলতে থাকা শাকিলের এক অনুসারীর ওপর হামলা চালান দাঁতলা সুমন, রানা, বাইট্টা মাসুম ও রনিসহ অন্তত ১০ জনের একটি দল।
সেখানে শাকিল গ্রুপের রনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনা দেখে ফেলার পর রানাদের ধাওয়া দেয় শাকিলের অনুসারীরা। একসময় ধাওয়া খেয়ে রানা বাকিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাকে সাউথল্যান্ড মার্কেটের সামনে একা পায় শাকিলের ১৫-২০ জন অনুসারী। আর নিজেদের কর্মীকে ছুরি মারার অপরাধে রানাকেও কুপিয়ে জখম করে তারা।
ঘটনার বিষয়ে জানতে আহত রানার নেতা এসএম পারভেজকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে শাকিল গ্রুপের এক নেতা কাজী মাহমুদুল হাসান রনি বলেন, ‘পারভেজের অনুসারী রানা আমাদের এক ছোট ভাইকে ছুরি মারে। পরে তাকে ধরে আমাদের ছোট ভাইয়েরা মারে। আমি এর বেশি কিছু জানি না।’
পরে যোগাযোগ করা হলে ওসি ফজলুল কাদের পাটোয়ারী বলেন, পুলিশ বিস্তারিত তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএস/ডিজে