চট্টগ্রামে বন্দি পালানোর কাণ্ডে ‘তিরস্কার’ই সিনিয়র জেল সুপারের শাস্তি

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দি পালানোর ঘটনায় সিনিয়র জেল সুপারকে (চলতি দায়িত্ব) শাস্তি হিসেবে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে। গত ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ২৮ বছর বয়সী এক বন্দি পালানোর ঘটনায় দায়িত্বে উদাসীনতা ও অসদাচরণের দায়ে শফিকুল ইসলাম খানকে ‘লঘু’ এই দণ্ড দেওয়া হল।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের (শৃঙ্খলা-১ শাখা) সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই বিভাগীয় আদেশ জারি করা হয়।

ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বন্দি লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পরও বন্দি নিখোঁজ রয়েছে মর্মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন প্রেরণ করে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান প্রতারণা করেছেন।

চলতি বছরের ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কারাগারের চারতলা একটি ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে ২২ ফুট দূরের ১৮ ফুট উঁচু দেয়াল ডিঙিয়ে পালিয়ে যান বন্দি আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেল (২৮)। ঘটনার দিন ফরহাদ চট্টগ্রাম কারাগারের ৩২ নম্বর সেল ভবনের দরজা বন্ধ থাকায় জানালার গ্রিল দিয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠেন। এরপর সিঁড়ি বেয়ে চারতলার ছাদে যান। সেখান থেকে লাফিয়ে ১৮ ফুট উচুঁ প্রাচীর পার হন। ওই ভবন থেকে ২২ ফুট দূরের সীমানা প্রাচীর পার হয়ে এরপর তিনি কারাগারের বাইরে চলে যান।

ঘটনার তিন দিন পর ৯ মার্চ নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার বাল্লাকান্দি চর এলাকা থেকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ ফরহাদ হোসেন রুবেলকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনার পর পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া মো. নাজিম উদ্দিন ও মো. ইউনুস নামে দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি কামাল হায়দার নামে এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।

এ ঘটনার তদন্তে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন মো. ছগির মিয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আরেকটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খানের দায়িত্ব পালনকালে হাজতি (নম্বর: ২৫৪৭/২০২১) ফরহাদ হোসেন রুবেল কারাগার থেকে পালানোর ঘটনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদচারণের’ অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা (নম্বর ০৮/২০২১) দায়ের করা হয়।

ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ বিবরণী, অভিযোগনামা, দাখিলকৃত জবাব, ব্যক্তিগত শুনানি পর্যালোচনা শেষে তার বিরুদ্ধে এই লঘুদণ্ড প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, শফিকুল ইসলাম কারাবিধির ৭১, ৭১ (১), ৭৩, ৭৮, ৮৩ ধারার বিধান অনুযায়ী কারাগারের জেলারের কাজ এবং অধস্তনদের দায়িত্ব-কর্তব্য তদারকি ও বন্দি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!