চট্টগ্রামে বউয়ের মামলায় পরকীয়ায় আসক্ত কম্পিউটার সমিতির নেতা গ্রেপ্তার

গৃহকর্মী শিশু ধর্ষণের অভিযোগ

৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রীর নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল রাজীব প্রকাশ সুমন (৩৮)। তার বিরুদ্ধে ১৩ বছরের এক গৃহকর্মী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু ট্রাইবুন্যালে (৫) দায়ের করা মামলার (৯/১) তদন্ত করছে পিবিআই। অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল রাজীব প্রকাশ সুমন চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার গুলজার মোড়ের মোতালেব টাওয়ারের নিচতলার এসএএস কম্পিউটার দোকানের মালিক। তিনি চট্টেশ্বরী সড়কের এপিক অঙ্গন টাওয়ারের বাসিন্দা।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে— একথা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘স্ত্রী ফাতেমা বাদি হয়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৮ সনের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় মামলা দায়েরের পর রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। সেই পরোয়ানা মূলে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি।’

এর আগে সুমনের বিরুদ্ধে তার বাসার কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ৩ এপ্রিল স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

মামলার বাদির আইনজীবী সুরঞ্জিত বড়ুয়া রাজু বলেন, ‘অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল রাজীব প্রকাশ সুমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করতে আমার মক্কেল চকবাজার থানায় গেলে থানা আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। সেই আলোকে এপ্রিলের শুরুতে আমরা নারী ও শিশু ট্রাইবুন্যালে মামলার আবেদন করি। আদালত আমাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআিইকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, “বাদীর সঙ্গে অভিযুক্ত সুমনের বিয়ে হয় ২০১৫ সালে। তাদের সাংসারিক জীবনে ৪ বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। সন্তান প্রসবের পর থেকে সুমন স্ত্রীর সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতো।’

বিভিন্ন সময় নারী নিয়ে দেশের বিভিন্ন হোটেল যাওয়ার অভিযোগও তোলেন তার স্ত্রী। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ মামলার বাদি কানিজ ফাতেমা তার মায়ের সঙ্গে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে যান। এ সুযোগে দুপুরে তাদের বাসায় নিয়োজিত প্রধান গৃহকর্মীকে বিদায় দিয়ে তার সহযোগী ১৩ বছরের শিশুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে সুমন। ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বললে তার ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেয়— এমন অভিযোগ আনা হয় মামলার এজাহারে।

কিন্তু কানিজ ফাতেমা বাসায় ফিরলে শিশুটি পুরো ঘটনা তাকে বলে দেয়। শিশুর মুখে বর্ণনা শুনে কানিজ ফাতেমা তার স্বামীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে স্বামী সুমন তাকে মেরে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। সেই থেকে কানিজ ফাতেমা তার মায়ের কাছে আছেন এবং শিশুটিকে চিকিৎসা করিয়ে মায়ের বাসায় রেখেছেন।

সিএমএম আদালতে দায়ের করা মামলায় রাজীবের স্ত্রী অভিযোগ করেন— সুমন একজন যৌতুক লোভী, নারী নির্যাতনকারী, বহু নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনকারী পর-নারী আসক্ত ব্যক্তি। ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ১৫ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের শুরুতে তারা সুখে সংসার করলেও সন্তান জন্মের পর তার আচরণ পাল্টে যায়। ব্যবসা করার জন্য স্ত্রীর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেয়।

সুমনের পাল্টে যাওয়া চরিত্র নিয়ে স্ত্রী অভিযোগ করেন, সুমন বিভিন্ন নারীর সঙ্গে হোটেলে রাত কাটাতেন। পরনারীর সঙ্গে রাতযাপন ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ছবি স্ত্রীকে দেখিয়ে বলতো—তুই যদি যৌতুকের টাকা এনে না দেস তবে তোকে যে কোনো সময় তালাক দিয়ে দেবো। তোকে এতদিন রাখছি রান্না করে ভাত খাওয়ানোর জন্য, কারণ আমি হোটেলে খাবার খেতে পারি না।

এজাহারে মামলার বাদী কানিজ ফাতেমা আরও উল্লেখ করেন—সুমন ক্রমাগত খারাপ ব্যবহার করলে নিজের জমানো টাকা এবং বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে তাকে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করিয়ে আনেন। তারপর নির্যাতন অব্যাহত রাখলে তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে আশ্রয় নেন।

মামলার বাদি কানিজ ফাতেমার ভাই মোহাম্মদ সেলিম জানান, ‘ভিকটিম শিশুটিকে আমার মা খুব পছন্দ করেন। তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা আমার মায়ের কাছে শিশুটিকে রেখে যান। সে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে বড় হচ্ছে। টুকটাক ঘরের কাজে সহযোগিতা করে। পিতৃহারা শিশুটির মায়ের সম্প্রতি দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে। আমরা উনার আগের মুঠোফোন বন্ধ পেয়েছি। এজন্য আমার বোন বাদি হয়ে শিশুটির পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm