চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ধর্মপুরের বাসিন্দা ঝর্ণা রাণী দত্তের হঠাৎ জ্বর আসে গত ২৪ আগস্ট। তবে তিনি মেয়ে গীতা রাণীকে বলেন এটি ‘সাধারণ জ্বর’। তাই জ্বর সারাতে খেয়েছেন প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। এর দু’দিন পর ২৫ আগস্ট ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তাকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ঝর্ণা রাণীর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।
ডেঙ্গু শনাক্ত হতেই ঝর্ণা রাণীর প্রেসার কমে যায়, শুরু হয় ডায়রিয়া। সঙ্গে বেড়ে যায় ডায়াবেটিসও। এরপর তাকে গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে রক্তের প্লাটিলেট ১০ হাজারে নেমে আসে তার। শেষ পর্যন্ত গত ২ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঝর্ণা রাণী দত্ত।
ঝর্ণা রাণী দত্তের (৪৩) বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার দোহাজারী ধর্মপুরে। তার স্বামীর নাম সুকুমার কান্তি দত্ত। ঝর্ণা রাণী চট্টগ্রাম ইপিজেডে ইয়ংওয়ানে চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে তিনি ফ্রি-পোর্ট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ঝর্ণা রাণীর বড় মেয়ে গীতা রাণী দত্ত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মাকে চিতায় শুইয়ে দিয়েছি। সেই আগুন সংসার পোড়ানো আগুন। ডেঙ্গু আমার পরিবারকে চিতার আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে গেছে।’
ঝর্ণা রাণীসহ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই মারা গেছেন ২৮ জন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১২৯ জন। এনিয়ে চলতি মাসে ৩৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ১২৯ জন রোগীর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৭৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের ৭৭ রোগীর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৯, জেনারেল হাসপাতালে ৯, বিআইটিআইডিতে ১৫, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, চট্টগ্রামে ৪ ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন ভর্তি আছেন।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৩৫ জনে। এদের ৩ হাজার ৫৯৫ জন সরকারি হাসপাতালে এবং ২ হাজার ৫৪০ জন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩২৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫ হাজার ৮০৬ জন।
আইএমই/ডিজে