চট্টগ্রামে পুলিশ বক্স ভাঙচুর, সাঁজোয়া যানে শিক্ষার্থীদের ঢিল
ওয়াসা মোড়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া
চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড় এলাকায় শিক্ষার্থী-জনতার গণমিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশে একটি বক্স ভাঙচুর ও পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়েছে। তবে ভাঙচুর চলাকালে পুলিশ বক্সে কেউ ছিল না।
শুক্রবার (২ আগস্ট) পৌনে চারটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচি অনুযায়ী হাজার হাজার শিক্ষার্থী-জনতার একটি গণমিছিল নগরীর নিউমার্কেট মোড়, টাইগারপাস মোড় হয়ে জিইসি মোড়ের দিকে এগোচ্ছিল। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার অনেক মানুষও সংহতি জানিয়ে যোগ দেন। গণমিছিলটি ওয়াসা মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা একযোগে ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গলিতে সরে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওয়াসা মোড়ে এ সময় অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান এসে অবস্থান নেয়। পুলিশের এই বিশেষায়িত গাড়িটি দেখার পরপরই শিক্ষার্থীরা সেটি লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকেন। সাঁজোয়া যানটি এরপর ওয়াসা মোড়ের সামনে থেকে পাশে আলমাস সিনেমা হলের দিকে চলে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা ওয়াসা মোড়ের একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এরপর মিছিলটি জিইসি মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের সামনে অবস্থিত ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের’ নামফলকটি ভেঙে ফেলা হয়।
এর আগে শুক্রবার (২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিল সহকারে তারা লালদিঘি আসতেই শুরু হয় বৃষ্টি। তবে বৃষ্টির বাধাও মানেননি শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টির মধ্যেই তারা নিউ মার্কেট মোড়ে এসে অবস্থান নেন। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ঢল নামে। পরে শিক্ষার্থীরা টাইগারপাস মোড়ে এসে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীরা এ সময় ন্যায়বিচার চেয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানগুলোর মধ্যে ছিল— ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই, ’ ‘সামনে আসছে ফাল্গুন, আমরা হব দ্বিগুণ’, ‘তোমার কোটা তুমি নাও, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দাও’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’।
সমাবেশস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন।
টাইগারপাস মোড়ে বেশ কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করে থাকার পর শিক্ষার্থীরা জিইসি মোড়ের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু কর্মী তাদের পথরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেটাও তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মিছিলটি এরপর মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাটের দিকে এগোতে থাকে। সন্ধ্যায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এটি বহদ্দারহাটে অবস্থান করছিল।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বলেন, পুলিশ তাদের আন্দোলন দমানোর জন্য গুলি চালিয়ে নির্বিচার হত্যা করে অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তারা যেকোনো মূল্যে এ ধরনের অন্যায় বন্ধের দাবি জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ এর ডাক দেয়। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইনজীবী, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, আলেম-ওলামা, শ্রমিক, অভিভাবকসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বিএস