চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ১২ আসামি ছয়দিনের রিমান্ডে
চিন্ময়কাণ্ডে ৭৯ জনকে আসামি করে আরেক মামলা
চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়া মামলায় গ্রেপ্তার ১২ আসামির ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া ৭৯ জনকে আসামি করে এ ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন—জয় নাথ, সুমন দাস, রাজেশ দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, সুমিত দাস, আমান দাস, বিশাল দাস, সনু মেথর, দুর্লভ দাস ও অজয় সূত্রধর চৌধুরী।
এর আগে সোমবার পুলিশের ওপর হামলার আরেক মামলায় আট আসামির সাতদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দুই মামলায় ১২ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হলে তার অনুসারীদের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদি হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
একইসঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদানসহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও চারটি মামলা করা হয়। পাঁচ মামলায় গ্রেপ্তার হন ৩৯ জন। এদের মধ্যে ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা দিতে গিয়ে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন। পরে তিনি পদত্যাগ করেন।
৭৯ জনকে আসামিকে করে আরেক মামলা
চিন্ময়কাণ্ডে সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এতে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলাটি করেন খুলশী থানা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী।
মামলার আসামিরা হলেন—সাবেক কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক জিনাত সোহানা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা সমীর কুমার দে, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপন কান্তি নাথ, ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত আহমেদ, কাজী তানভীর। মামলায় অন্য আসামিদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকনের সমর্থক বলে উল্লেখ করা হয়।
বাদি নিজেকে ব্যবসায়ী দাবি করে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৬ নভেম্বর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য তিনি একজন আইনজীবীর চেম্বারে যান। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বাসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় দেখতে পান—ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ইসকন সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছেন। বাদির মাথায় টুপি দেখে আসামিরা ‘শিবির ধর, শিবির ধর’ বলে মারধরের জন্য এগিয়ে আসেন। তখন তিনি ভীত হয়ে দৌড়ে রঙ্গম সিনেমা হলের গলিতে ঢুকলে আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাত একজন লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। তখন আসামি বিজয় হাতে থাকা ছোরা দিয়ে জবাই করারও হুমকি দেন।
পরে উপস্থিত জনতা এগিয়ে গেলে আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ওই সময় অটোরিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন বলে উল্লেখ করেন বাদি।