চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর আবার দুর্বৃত্তের হামলা, কাজে ফিরতে ভয় (ভিডিওসহ)
১০ থানা ধ্বংসপুরী, ভেঙে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা
চট্টগ্রামে থানায় যোগ দিতে আসা এক নিরস্ত্র পুলিশসদস্যের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন দুর্বৃত্ত এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথায়, পিঠে ও বুকে জখম হয়। এ সময় তার মোটরসাইকেলটিও ভাঙচুর করা হয়। পরে সেনাসদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এমন ঘটনায় চট্টগ্রামে আবার নতুন করে পুলিশসদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাদের অনেকে কাজে যোগ দিতেও ভয় পাচ্ছেন।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনের পূর্ব পাশে গোল্ডেন টাচ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার ওই পুলিশসদস্য হলেন বন্দর থানার কনস্টেবল জসিম উদ্দিন।
জানা গেছে, কনস্টেবল জসিম তার মোটরসাইকেলে করে আগ্রাবাদ ব্যাপারিপাড়া থেকে বন্দর থানায় তার কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে তিন থেকে চারজন যুবক তার গতিরোধ করেন। তারা জসিম পুলিশ কিনা জিজ্ঞেস করেন। এমন প্রশ্নে তিনি নিরুত্তর থাকার একপর্যায়ে তার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন।
এ সময় ওই পুলিশসদস্যের মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পরে পুলিশ লাইন গেইটে কর্তব্যরত সেনাসদস্যরা গিয়ে কনস্টেবল জসিমকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্দর থানার কনস্টেবল জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আজকে পাঁচদিন বাসায় থাকার পর আজকে থানার দিকে যাই। গিয়ে দেখি যে, থানায় কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এরপর আমি সেখান থেকে ফিরে আসি। আমি আগ্রাবাদ ব্যাপারিপাড়া ক্রস করার পর আমি যখন গোল্ডেন টাচ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসি, তখন হঠাৎ করে তিন-চারটা ছেলে এসে আমার মোটরসাইকেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। তারা জিজ্ঞেস করে আপনি কি পুলিশ? আমি তখন চুপ করে আছি। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০টা ছেলে কোথা থেকে যেন এসে একযোগে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে আমাকে। পরে আমার পরিচিত দুই ছেলে এসে আমাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে। পরে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি এসে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে আনে।’
এদিকে আরও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তদের পাশাপাশি চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীরাও পরিচয় জিজ্ঞেস করার সময় অনেককে পুলিশ সদস্য কিনা আলাদা করে জিজ্ঞেস করছেন। এটাকেও উদ্বেগজনক মনে করছেন পুলিশের অনেক সদস্য।
এদিকে পুলিশসদস্যরা কাজে যোগ না দেওয়ায় পুরো চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্মরণকালের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়ে গেছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক ব্যাংকের কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় চলছে দুর্বৃত্তদের নিরব চাঁদাবাজি।
দুর্বৃত্তের হামলায় চট্টগ্রামের ১০ থানা বিপর্যস্ত
সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বিক্ষোভকারী ও দুর্বৃত্তদের হামলা, লুটপাট এবং আগুনে চট্টগ্রামের অন্তত ১০টি থানা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে— কোতোয়ালী, আকবরশাহ, পতেঙ্গা ও পাহাড়তলী থানা। অন্যদিকে ৬টি থানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এগুলো হচ্ছে—ডবলমুরিং, সদরঘাট, ইপিজেড, বন্দর, হালিশহর ও চান্দগাঁও থানা। ভাঙচুর করা হয়েছে দামপাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন, দুই নম্বর গেটের জেলা পুলিশ সুপার অফিস ও মনসুরাবাদ পুলিশ লাইন্সেও। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশসদস্য আহত হন।
৫ আগস্ট বেলা পাঁচটার দিকে আগুন দেওয়া হয় কোতোয়ালী থানায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হয়ে যান। দুর্বৃত্তরা সেখানে লুটপাট চালায়। একই সময়ে একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে পতেঙ্গা থানায়। দুর্বৃত্তরা সেখানেও আগুন লাগিয়ে দেয়। আকবরশাহ থানা থেকে লুট করা হয় অস্ত্র ও মালামাল।
একইদিন বিকেল তিনটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে আগুন দেয় পাহাড়তলী থানায়।
থানায় থানায় হামলার পাশাপাশি ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একদল দুর্বৃত্ত দামপাড়া নগর পুলিশের সদর দপ্তরে হামলার চেষ্টা করে। তারা মুল ফটক ঘিরে পুলিশ জাদুঘরে ভাংচুর চালায়। ওই সময় দুর্বৃত্তরা অস্ত্র ও পুলিশ জাদুঘরের মূল্যবান অনেক স্মারক লুটপাট করে। এর আগে বিকেলে হামলা চালানো হয় দুই নম্বর গেটের জেলা পুলিশ সুপার অফিস ও মনসুরাবাদ জেলা পুলিশ লাইন্সে।
সিপি