চট্টগ্রামে পিডিবির ১৪২ কোটি টাকা পাওনা সরকারের কাছেই, শুরুতে সিটি কর্পোরেশন

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম জোনের বিল বকেয়া রয়েছে ১৪১ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ টাকা। দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও এসব বকেয়া পরিশোধ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না পারার কারণ হিসেবে ফান্ড না পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বিল পরিশোধ না করার পিছনে ফান্ড না পাওয়ার যুক্তি তুলে ধরছেন।

এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছেই পাওনা আছে ৫৯ কোটি ৩০ লাখের বেশি। এছাড়া ৩৪ কোটি ২৯ লাখের বেশি বকেয়া রেখে তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বকেয়া প্রায় ১২ কোটি ৬০ হাজার টাকা।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ ১০ কোটি ৫০ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬৮ টাকা, সিটি কর্পোরেশনের ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৫ টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ৩৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৩ টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১২ কোটি ৬০ হাজার ৭০৮ টাকা।

এছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিল বকেয়া রয়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭১১ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টাকা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৯০ টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৭২ লাখ ২১ হাজার ৮৭ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮৪ লাখ ৩৯ হাজার ১০ টাকা, অন্যান্য ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার ২১১ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪২ টাকা, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ৪৭ লাখ ৮০ হাজার ৫২১ টাকা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪৬ লাখ ৪ হাজার ৫৭ টাকা; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৫ টাকা; শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা) ৪৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৭১ টাকা; ডাক, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৪২ লাখ ৯৫ হাজার ২১ টাকা; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বকেয়া বিল ৩৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৮ টাকা।

এছাড়া সড়ক পরিবহন, সেতু মন্ত্রণালয়ের ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা; পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৪ টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৪০১ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৫ টাকা; পরিবেশ, বন, জলবায়ু মন্ত্রণালয় ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৮ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৫২৭ টাকা, সুরক্ষা সেবা মন্ত্রণালয় ১১ লাখ ৪৫ হাজার ২৩৯ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয় ১১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩১ টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১১ লাখ ২৭ হাজার ৬০৫ টাকা, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৪৫ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯ লাখ ৩০ হাজার ২৯ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বকেয়া বিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৯ টাকা।

শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৪ লাখ ৬৮ হাজার ১২৪ টাকা, তথ্য মন্ত্রণালয় ৪ লাখ ৮৮৪ টাকা, অর্থ মন্ত্রণালয় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬৮ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭২৪ টাকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৫ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৬ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬৭ টাকা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৪৯ লাখ ১৭ হাজার ৩০৫ টাকা, নির্বাচন কমিশন ৪৯ হাজার ৩২১ টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ৩২ হাজার ২৯৩ টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৫৬১ টাকা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৭৬৯ টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৮ হাজার ৫০৪ টাকা।

সবমিলিয়ে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশনের পিডিবি চট্টগ্রাম জোন বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪১ কোটি, ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ টাকা।

চট্টগ্রাম জেলা ও ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর জেনেছিলাম পিডিবির কিছু বিল বকেয়া আছে। অবাঙালিদের রেলের জমিতে থাকতে দিয়েছিল সরকার। তখন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে বলে শুনেছি। আসলে এটা অনেক আগের ঘটনা। আর ৩৪ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বাকি আছে, এটা পিডিবি থেকে আমাদের অফিসে অবহিত করা হয়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানে।’

পিডিবি চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবাঙালিদের বকেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই শুরু। মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কিছু বিল দিয়েছিল। তারপর সেটি জরিমানা বেড়ে এখন ৩৪ কোটিতে ঠেকেছে।’

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, নতুনভাবে মনিটরিং করে অভিযানে গিয়ে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করার। আর অবাঙালিদের বকেয়া বিলের বিষয়েও একটা সিদ্ধান্ত নতুন করে মন্ত্রণালয় থেকে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বক্তব্য, ফান্ড না থাকার কারণে তারা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারেন না। তবে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm