চট্টগ্রামে পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে টাকা ঢালছে বড় বড় এনজিও, ওয়াসা দিচ্ছে পানির লাইন

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ আবাসিক এলাকাগুলোতে বড় বড় এনজিও বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা ঢালছে। সেই টাকায় সেখানে নির্মিত হচ্ছে ঘর, স্কুল, স্যানিটারি টয়লেটসহ নানা স্থাপনা। অবৈধ জেনেও খোদ সরকারি সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা সেখানে দিয়ে যাচ্ছে পানির লাইনও। অথচ দুর্যোগ এলে এসব অবৈধ বসতি থেকে লোক সরাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনকে।

টানা বর্ষণসহ বিভিন্ন দুর্যোগে পাহাড়ধসের শঙ্কা এলে চট্টগ্রাম নগরীর অন্তত ১৭টি পাহাড় থেকে সেখানে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে জেলা প্রশাসনের মোবাইল টিম। এটা করতে গিয়ে প্রতিবারই তাদের বেগ পেতে হয়। অবৈধভাবে বসবাসরত বেশিরভাগ পরিবারই ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সেখান থেকে আসতে চায় না।

শুক্রবারও (২৩ অক্টোবর) ঘটেছে এমন ঘটনা। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সার্কেলের সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) নেতৃত্বে শতাধিক পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়।

আকবরশাহ এলাকার ১ নম্বর ঝিলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক।
আকবরশাহ এলাকার ১ নম্বর ঝিলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ স্যারের নির্দেশনায় শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকেই জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম নগরীর অভ্যন্তরে ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি পাহাড় এবং বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকায় নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ১৬টি পাহাড়ে মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।’

জানা গেছে, নগরীর আকবরশাহ থানার ঝিল-১, ঝিল-২, ঝিল-৩, জয়ন্তিকা আবাসিক, শান্তিনগর, মধ্যমনগর, জিয়ানগর আবাসিক এলাকা তৈরি করা হয়েছে পাহাড় কেটে। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের লেকসিটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নেও কাটা হয়েছে বেশকিছু পাহাড়।

পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে সুইডেনভিত্তিক একটি এনজিওর উন্নয়ন প্রকল্প চলেছে।
পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে সুইডেনভিত্তিক একটি এনজিওর উন্নয়ন প্রকল্প চলেছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা এসব অবৈধ আবাসিক এলাকায় স্যানিটেশন, স্কুলিং প্রজেক্ট, বেবি ও মাদার হেলথ কেয়ারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা, যুক্তরাজ্যভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডি, ইউকে এইড, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএস এইড থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘আকবরশাহর ঝিল এলাকায় আমরা দেখেছি বিভিন্ন স্বনামধন্য এনজিও সেখানে কাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়েই এনজিওর অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে নানা প্রকল্প। নির্মাণ করা হয়েছে ঘর, স্কুল, স্যানিটারি টয়লেট।’

জানা গেছে, এনজিওগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সরকারি সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা অবৈধ জেনেও ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়ি বসতিতে পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বললেন, ‘সবচেয়ে অবাক কাণ্ড হল, আজকে (শুক্রবার) ঝিল এলাকা পরিদর্শনের সময় স্থানীয়রা জানিয়েছে, জাইকার অর্থায়নে ওয়াসার পক্ষ থেকে সুউচ্চ পাহাড়ি এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতিতে ওয়াসার মতো দায়িত্বশীল সংস্থার পানি সরবরাহের বিষয়ে জানতে একাধিকবার সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল্লাহর মুঠোফোনে ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, পাহাড়তলীর ফয়’স লেক ও আশপাশের এলাকার প্রায় ৩৩৬ একরের মতো জায়গা বিনোদন পার্ক হিসেবে ব্যবহারের জন্য কনকর্ড গ্রুপকে লিজ দিয়েছিল রেলওয়ে। ২০১৭ সালে রেলওয়ে কনকর্ড গ্রুপের সঙ্গে হওয়া সেই লিজ বাতিল করে। লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে কনকর্ড গ্রুপ। ওই রিটে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাস কো) জারি করেন। এরপর ফয়’স লেক এলাকার চারদিকের পাহাড়ি জমিতে স্থানীয়রা জায়গা দখলের উৎসব শুরু করে রীতিমতো। লিজ গ্রহীতা কনকর্ড গ্রুপ ও রেলওয়ের প্রশ্রয়ে ঝিল এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুরা পাহাড়ি জমি কেটে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!