চট্টগ্রামে নৌকার বিদ্রোহীদের বরণ করে নিলেন এমপি মোছলেম ও হুইপের ভাই, সমালোচনার ঝড়

‘কেনই বা বহিষ্কার, কেনই বা আবার ফুল’

উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোসলেম উদ্দিন আহমদ। অন্যদিকে পটিয়ায় নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিজয় উদযাপন করলেন হুইপ ও পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব।

পটিয়ায় নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিজয় উদযাপন করলেন হুইপ ও পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব।
পটিয়ায় নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিজয় উদযাপন করলেন হুইপ ও পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে নৌকা ডোবানো বিদ্রোহী প্রার্থীকে এভাবে বরণ করে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে নৌকার বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিয়ে পটিয়ায় হুইপের ছোট ভাই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার ‘বিজয় উদযাপন’ ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জাকারিয়া ডালিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ডালিম পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় ডালিমসহ আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ১৪ জনকে বহিষ্কার করে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই এখন এটিকে ‘বহিষ্কারের নাটক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বহিস্কৃত বিদ্রোহী চেয়ারম্যানকে বরণ করে নিলেন খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
বহিস্কৃত বিদ্রোহী চেয়ারম্যানকে বরণ করে নিলেন খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরও সংসদ সদস্যরা ছাড়াও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের বলয় ভারী করতে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে নিজেদের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। যার ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল তীব্র হয়ে উঠছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বহিস্কৃত বিদ্রোহী চেয়ারম্যানকে বরণ করে নিলেন খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। আবার জন্মদিনের আড়াল নিয়ে হুইপের ছোট ভাই নবাব বিদ্রোহীদের নিয়ে ‘বিজয় উদযাপন’ও করলেন। এগুলো করা মানে একদিকে তাদের একপ্রকার পুরষ্কৃত করা, আবার অন্যদিকে ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ছোট করা।

নৌকার বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হয়ে আসা জাকারিয়া ডালিমের উদাহরণ টেনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, ‘পটিয়ার কুসুমপুরায় নৌকার প্রার্থী ইব্রাহিম বাচ্চুকে হারিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান হন ডালিম। তাকেসহ আরও কয়েকজনকে জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করে বিদ্রোহী হওয়ার কারণে। কিন্তু নির্বাচনের পরে চাপা আনন্দ আর তারা লুকাতে পারেননি। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির এমন আচরণে হতবাক আওয়ামী লীগ নেতারা।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও বিব্রত। এটি নিয়ে কর্মীদের তোপের মুখে পড়েতে হচ্ছে। আমরা কেনইবা তাদের বহিষ্কার করলাম, কেনই বা আবার ফুল নেবো? ওনার (সাংসদ মোসলেম) কথা বলে দেখবো। তিনি এমনটা কেন করলেন?’

পটিয়ায় বিদ্রোহীদের নিয়ে নবাবের ‘বিজয় উদযাপন’

পটিয়ায় নৌকা প্রতীকের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিজয় উদযাপন করলেন হুইপ ও পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা হুইপের পক্ষে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন এলাকায়।

গত বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে পটিয়া উপজেলা যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হক লিটনের জন্মদিনে এই বিজয় উদযাপন করেন মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব। ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেবল নৌকার বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হয়ে আসা ইউপি চেয়ারম্যানরাই। এরা হলেন— জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজ, কুসুমপুরা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিম এবং কোলাগাঁও ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চৌধুরী। এরা তিনজনই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ওই অনুষ্ঠানে এর বাইরে নৌকার প্রার্থী হিসেবে শুধু ছিলেন পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমার।

গত ২৬ ডিসেম্বর পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টিতে নৌকা এবং চারটিতে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। এর মধ্যে মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের ‘বিজয় উদযাপন’ অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র হাইদগাঁও ইউনিয়নে বিএম জসিমকে দেখা যায়নি।

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় পটিয়া উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের ১৪ নেতাকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই জরুরি সভায় যাদের বহিষ্কার করা হয়, তারা হলেন— হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বি এম জসিম, কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরী, কুসুমপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া ডালিম, জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাহাদাত হোসেন সবুজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উর রশীদ চৌধুরী এজাজ, আশিয়া ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও আশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মাঈনুল হক রাশেদ, কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য কাসেম রাসেল, কেলিশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল দে, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, ধলঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শফিউল আলম বাদশা, জিরি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভোলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কালাম বাবুল, ছনহরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবু জাফর।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!