চট্টগ্রামে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চেয়ারম্যানের
১৫ নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা, লুটপাট
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল মিয়া। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় তার ঘরে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা আসলাম সরওয়ার রিমনের অনুসারীরা। তবে হামলার ঘটনায় মির্জা আসলাম জড়িত নয় বলে দাবি করছেন। উল্টো পারিবারিক মারামারিতে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগকর্মী হাসানের বাড়িতেও চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ। তার বাড়ি থেকে লুট করা হয়েছে প্রায় নগদ দু’লাখ টাকা, স্বর্ণ ও মূল্যবান দলিল। নৌকার পক্ষে কাজ করায় হাসানের মতো আরও অন্তত ১৫ জনের বসতবাড়িতে চলে হামলা ও লুটপাট। দিনের আলোয় চেয়ারম্যান বাহিনীর তাণ্ডবে আহত হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা সানজিদের বাবা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন মির্জা আসলাম। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে এলাকায় নৌকার পক্ষে কাজ করা লোকজনের বাড়িতে হামলা করছেন—এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এলাকায় নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীও রয়েছে তার। হামলার পাশাপাশি নগদ টাকা, প্রয়োজনীয় জিনিস লুটপাটও করেছে তারা। মির্জা আসলাম নিজে উপস্থিত থেকে এসব হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ত্রাসের রাজত্ব কায়েমে অপ্রতিরোধ্য মির্জা আসলাম।
এরমধ্যে গত ৯ ডিসেম্বর ঢেমশা ইউনিয়নের আলমগীরপাড়া, বড়বাড়ি ও আলী ফকির এলাকার অন্তত ১৫টি বসতবাড়িতে হামলা চালিয়েছে চেয়ারম্যান বাহিনী। যাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগ নেতা, নৌকার পক্ষে কাজ করা ও ছাত্রলীগকর্মী। হামলার পরে পুলিশ চেয়ারম্যানের বাড়ির দিকে গেলে স্থানীয় মসজিদে ‘ডাকাত দল’ বলে প্রচার করা হয়। চেয়ারম্যানোর বাড়িতে ডাকাত এসেছে বলে পুলিশকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টাও করে চেয়ারম্যান বাহিনী।
এ ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ আরও ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মিয়ার ছেলে মো. আলী। এরমধ্যে দু’জন গ্রেপ্তার হলেও মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয়রা বলছেন, চেয়ারম্যান মির্জা আসলাম সরওয়ার রিমন ও তার ভাই সাগরের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে এলাকায় আসে। পরে একে একে বসতবাড়িতে হামলা, মারধর ও লুটপাট করে তারা। এ সময় ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা মো. পারভেজ, সানজিত, নিহান, কোরবান আলী, মো. শাহ আলম, মুছা, ফয়সাল, মো. হারুন, আবুল কাশেম, হাজী আবদুর রশিদের বসতঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ঘরের ঘেরাবেড়া, আসবাবপত্র ও হাড়ি-পাতিল ভেঙে তছনছ করে দেয়। এছাড়াও তারা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও জরুরি কাগজপত্র নিয়ে যায়।
ঢেমশা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামাল মিয়া বলেন, ‘বিগত ইউপি নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলাম। এজন্য চেয়ারম্যান রিমন নির্বাচনের পর থেকে আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। নৌকার পক্ষে কাজ করায় ইতোপূর্বে রিমন ও তার কর্মী-সমর্থকরা অনেক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বসতঘরে হামলা চালিয়েছে।’
এ বিষয়ে ঢেমশা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মির্জা আসলাম সরওয়ার রিমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম শ্বশুর বাড়িতে। অথচ বলা হচ্ছে, আমার উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে। নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পারিবারিক মারামারিতে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’
আরএম/ডিজে