চট্টগ্রামে নেচে-গেয়ে ‘সম্প্রীতি’র কনসার্ট, কাউন্সিলরের কাণ্ডে ক্ষুব্ধ হিন্দু নেতারা

সাম্প্রদায়িক সংঘাতে যখন হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশের বেশিরভাগ মানুষ বেদনার্ত, এমন সময়ে চট্টগ্রাম নগরীতে ‘সম্প্রীতি’র নাম দিয়ে কনসার্টের আয়োজন করে হিন্দু নেতাদের তোপের মুখে পড়লেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলর। এ ধরনের আয়োজনকে ‘উপহাস’ বলে উল্লেখ করে তারা বলছেন, হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোই এখন জরুরি।

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই ‘ওপেন এয়ার কনসার্ট সম্প্রীতি উৎসব’। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

দুর্গাপূজার সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনার প্রতিবাদের এই সময়ে এমন উৎসবকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও উপহাসমূলক’ বলে মনে করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক নেতা। তারা বলছেন, সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের এমন চেষ্টা সম্প্রীতি বাড়াতে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। এর বদলে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, ঘটনার বিচার দাবি করা, প্রতিবাদ জানানো ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সম্প্রীতি বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা চট্টগ্রামের বাসিন্দা মিলন শর্মা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কদিন আগে মাত্র যতন সাহা সহ ৬ জন হিন্দু মারা গেল সাম্প্রদায়িক হামলায়। যেসব মণ্ডপে ভাংচুর চালানো হয়েছে আগুন দেওয়া হয়েছে সেগুলোর ধূয়া উড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এভাবে নাচ গান করে উৎসব করাটা রীতিমতো উপহাস। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

সনাতন সংগঠনের সমন্বয়ক অশোক চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা যেকোনো ধরনের সম্প্রীতির অনুষ্ঠান বা উদ্যোগকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। আমি শুনেছি জামালখানে এমন একটা অনুষ্ঠান হবে। আমি খুশি হয়েছি। কিন্তু এটা যে গান-বাজনার অনুষ্ঠান হবে আমার জানা ছিল না।’

নাচে-গানে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার এমন উদ্যোগকে ভোটকেন্দ্রিক প্রচারণা হিসেবে উল্লেখ করে অশোক চক্রবর্তী বলেন, ‘দুর্গাপূজার পর থেকে বাংলাদেশে যা ঘটে গেছে— দুর্গত এলাকাগুলো আমরা ঘুরে এসেছি। ওখানকার মানুষের আহাজারি, কান্না, তাদের ভয়ভীতি ও অনিশ্চয়তা এগুলো দেখে আসার পরে কেউ যদি গান-বাজনা আনন্দ করে সম্প্রীতি দেখাতে চায়, আমি বলবো এটা হচ্ছে একটা রাজনীতি, একটা ভোটকেন্দ্রিক প্রচারণা। এটা হিন্দু সমাজ বা নির্যাতিতদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।’

তিনি বলেন, ‘গান-বাজনাটা না করে এখানে যদি একটা আলোচনা হতো বা কনসার্ট করে যদি একটা ফান্ড করা হতো দুর্গত এলাকাগুলোতে সহায়তার জন্য, তাহলেও আমরা এটাকে এপ্রেসিয়েট করতে পারতাম।’

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন দে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১৫০টি মঠ-মন্দিরে হামলা হয়েছে। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। সর্বস্ব হারিয়েছেন। এই অবস্থায় আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সেটা না করে এমন কনসার্ট করা হচ্ছে। নাচে-গানে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার এমন অনুষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর প্রতি এক ধরনের উপহাস বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে।’

প্রায় ২ বছর পর চট্টগ্রাম শহরে হওয়া এই কনসার্টে পারফর্ম করে দ্য ডিজায়ার, তীরন্দাজ, সাসটেইন এবং ইলেকট্রনিক ফোর্স ব্যান্ড।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!