চট্টগ্রামে নামি রেস্টুরেন্টের কর্মীরা অভাবে, বেতন নিয়ে ঘোরাচ্ছে মালিকরা

চট্টগ্রাম নগরীর নামি-দামি রেস্টুরেন্টগুলোতে যাদের হাতের ছোঁয়ায় ভোজনরসিকরা হরেকরকম খাবার খেয়ে মন জুড়াতেন, পর্দার আড়ালের সেই পাঁচক-পরিবেশকদের এখন দিন যাচ্ছে অর্ধাহার-অনাহারে। রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার এক মাসের মাথায় এসেও তাদের অনেকেই এখনও বুঝে পাননি মার্চ মাসের বেতন।

বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের শেফ (পাঁচক), টেবিল বয় ও অন্যান্য কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের জীবন নির্বাহের করুণ চিত্র। এমন তালিকায় যেমন আছে মাত্র ৪ মাসের নতুন উদ্যোক্তা, তেমনি আছে কয়েক বছর রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও।

হান্ডি ইন্ডিয়ান বিস্ত্রো, দামপাড়ার জুক, হালিশহরের খানদানী রেস্টুরেন্ট, জামালখানের দাওয়াত রেস্টুরেন্ট, কোকোলোকো রেস্টুরেন্ট, মোমিন রোডের স্যাফরান রেস্টুরেন্ট, পতেঙ্গার স্কাই ভিউ রেস্টুরেন্ট, খুলশী টাউন সেন্টারের ফুড কোর্ট, ফিনলে স্কয়ারের ফুড কোর্টেও অধিকাংশ কর্মীর বেতন এখনও পরিশোধ করা হয়নি।

হান্ডি ইন্ডিয়ান বিস্ত্রোর ম্যানেজার মাজহারুল হকের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের এখনও দুই-তৃতীয়াংশ স্টাফের বেতন বকেয়া রয়েছে। তবে যোগাযোগ করলে তাদের পাওনা পরিশোধ করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

হালিশহর ডিটি রোডের খানদানী রেস্টুরেন্টের মালিক মো. হাসান বলেন, ‘আমরা অর্ধেক স্টাফের বেতন দিতে পেরেছি, বাকিদের পারিনি। করোনা পরিস্থিতি কেটে রেস্টুরেন্ট চালু হলে বাকিদেরও দিয়ে দেবো।’

পতেঙ্গার বোট ক্লাব সংলগ্ন স্কাই ভিউ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শুভ জানান, ‘সকল স্টাফের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।’ কিন্তু স্টাফরা জানান, এখনও পরিশোধ করা হয়নি। ২৯ এপ্রিল যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

জিইসি মোড়ের রসাই রেস্টুরেন্টের মালিক রাকিবুল ইসলাম জানান, ‘ব্যবসা শুরু করার চার মাসের মাথাই করোনা ঝড় শুরু হয়েছে। ব্যবসা গোছানোর আগেই এই বিপর্যয়ে পড়লাম। স্টাফদের স্যালারি পরিশোধ করতে পারিনি। চেষ্টা করতেছি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে।’

ফিনলে স্কয়ারের ফুড কোর্টের অধিকাংশ স্টাফ বেতন পায়নি। তবে ওই মার্কেটের ফুড এভিনিউর মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার সাতজন স্টাফ আছে। মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছি। এপ্রিলের হিসাবও রেডি রাখতে বলেছি। রমজানের শুরুতে দিয়ে দেবো। অন্যদের কথা আমি জানি না।’

জামালখানের দাওয়াত রেস্টুরেন্ট ও কোকোলোকো রেস্টুরেন্টের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের বেতনের আংশিক দেওয়া হয়েছে। বাকিটা দেবে-দিচ্ছে করে এই এক মাস পার করেছে কর্তৃপক্ষ।

ওয়াসা মোড়ের মুনতাসির সেন্টারের জুক এবং আন্দরকিল্লা মোমিন রোডের সাফরান রেস্টুরেন্ট মালিকপক্ষ স্টাফদের স্যালারি দেওয়া তো দূরে থাক ফোনই ধরছে না বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানার জন্য কর্তৃপক্ষের মুঠোফোনে ফোন করে স্টাফদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলো। এই দুই রেস্টুরেন্টের মালিকপক্ষ অপরিচিত নাম্বার থেকে যাওয়া ফোন রিসিভ করেননি।

পাঁচকদের সংগঠন চট্টগ্রাম শেফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আরাফাত হোসেন বলেন, করোনার এই পরিস্থিতিতে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কর্মরত শত শত স্টাফ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। যে মানুষগুলো প্রতিদিন শত শত মানুষের প্লেটে, শত শত রকমের খাবার দিতো, আজ সেই মানুষগুলোর প্লেটে ঠিকমত ডালভাত আছে কিনা দেখার কেউ নেই। এই দুঃসময়ে মালিকদের পক্ষ থেকে কোন সাহায্য না পেয়ে চট্টগ্রাম শেফ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্টাফদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!