হাসপাতালের শয্যায় কন্যাসন্তানটি জন্ম নেওয়ার পরপরই তাকে ফেলে পালিয়ে যান বাবা ও মা। হাসপাতালে ভর্তির সময় বাবা ও মায়ের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল সেটি ছিল ভুয়া। ফলে নবজাতকের বাবা-মায়ের খোঁজে পুলিশ ও পৌর প্রশাসনের লোকজন অনেক অনুসন্ধান চালিয়েও শুরুতে বিফল হয়। কিন্তু এরপরই পুলিশ হঠাৎ করে হদিস পায় বাবা-মায়ের। এরপর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মায়ের কোলে ফিরেছে সেই নবজাতক।
রোববার (১ আগস্ট) রাত ১০টায় নবজাতক ফেলে বাবা-মায়ের পালানোর এই ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আবার সেই মাকে (২৩) খুঁজে এনে সোমবার (২ আগস্ট) রাত ৯টায় তার হাতেই তুলে দেওয়া হল নবজাতককে। তার আগে মাসহ পরিবারের অন্যদের কাছ থেকে নেওয়া হয় অঙ্গীকারনামা।
জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির সময় রেজিস্টারে নবজাতকের বাবার নাম সুবোধ বড়ুয়া বলে উল্লেখ করা হয়। ঠিকানা হিসেবে লেখা হয় বাঁশখালী পৌরসভার জলদী ২ ওয়ার্ড।
পালানোর ঘটনা জানার পর নবজাতকের পিতামাতার খোঁজে পুলিশ ও পৌর প্রশাসনের লোকজন বাঁশখালীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর জলদী বড়ুয়াপাড়ায় এলাকা অনেক খোঁজাখুজি করেও কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার জানান, বাবা-মাকে না পেয়ে ওই নবজাতক কন্যাসন্তানটিকে হাসপাতালের হেফাজতে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক নার্সের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। ওই নার্স দম্পতি নবজাতকটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেন। তবে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া যেহেতু দত্তক দেওয়া সম্ভব নয়, তাই নবজাতক শিশুটির প্রকৃত পিতা-মাতার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে।
বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক সফিউল কবির বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরে থানায় একটি জিডি হয়। পরে পুলিশ ওই মাকে খুঁজে পেয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর মায়ের কোলেই ফিরিয়ে দেয়া হয় ওই নবজাতককে।’
জানা গেছে, ডেলিভারির জন্য গর্ভবতী ওই মাকে হাসপাতালে এনেছিলেন যে রিকশাচালক, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই শেষপর্যন্ত সেই মায়ের হদিস মেলে।
তবে কেন ডেলিভারির পরপরই নবজাতককে ফেলে পালিয়ে গেলেন জন্মদাতা বাবা-মা— এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কন্যাসন্তান জন্মদানের কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশের কুসংস্কারাচ্ছন্ন অনেক মানুষ এখনও মনে করেন, কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়া মানে সংসারে পিছুটান চলে আসা। কন্যাসন্তান জন্ম হতে পারে সেই দুশ্চিন্তায় অনেকে সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এ ধরনের কুসংস্কার চলে এসেছে আধুনিক এই সমাজেও। বিত্তশালী ও প্রবাসী দম্পতিদের অনেকেই এখনও পুত্রসন্তানের আশা করেন বেশি।
সিপি