চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। খাল খনন ও খালগুলোর দুইপাশে রিটার্নিং ওয়ালসহ রাস্তা করার দায়িত্ব পড়ে তাদের ওপর। কিন্তু তাদের এসব কাজ কবে শেষ হবে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। এছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একইসঙ্গে পরিদর্শন ছাড়াই ভবন অনুমোদন দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ তোলেন সিডিএর বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এসব অভিযোগ তোলেন কাউন্সিলর হাসনী।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে চট্টগ্রামের কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কাউন্সিলর হাসনী। এ সময় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে খালগুলো মাটিতে ভরাট হওয়ায় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কাজের প্রেক্ষিতে হাসনী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর তাদের কাজ দ্রুত বুঝিয়ে দিতে চায়। আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারি না পানির জন্য, কষ্টের জন্য। ওনারা ২০১৮ সালে কাজ শুরু করে, এখন ২০২৩ সাল। এখন আগের চাইতে অনেক বেশি মাটি আছে খালে।’
হাসনী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, কখন তারা মাটিগুলো পরিষ্কার করবে? কখন বুঝিয়ে দেবেন? সেটা আমরা স্পষ্ট করে জানতে চাই। ওনারা যতটুকু মাটি উত্তোলন করেছে, তার চাইতে ৫ গুণ বেশি মাটি রয়েছে। এই মাটি সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়ে উত্তোলন করতে পারবে কি-না, সেটা হয়তো আমাদের মেয়র মহোদয় জানেন।’
হাসনী আরও বলেন, ‘আমার এলাকায় কাজীর খাল আছে। ২০১৮ বা ১৯ সালের দিকে ওনারা (সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর) কাজ করার জন্য কয়েকজন লোক পাঠায়। সপ্তাহখানেক কাজ করে চলে যায় তারা। এখন ওই খালে পাহাড় সমান মাটি হয়েছে, কেউ কখনও পরিষ্কার করেনি।’
সভায় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের পক্ষে কর্নেল মোহাম্মদ আজিজুর রউফ ও লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানান লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী। তিনি জানান, প্রজেক্টের ৩২টি খালের মধ্যে ২৭টি খালের কাজ ইতোমধ্যে প্রায়ই শেষ হয়েছে। যেহেতু ২০১৮ সাল থেকে এই প্রজেক্টটি চলমান তাই খান খনন করার পরও প্রতিবছর মাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালগুলো। তাই প্রতি বছর বছর মাটি উত্তোলনে আলাদা করে টাকা খরচ হচ্ছে। যদিও চুক্তি অনুযায়ী মাটি উত্তোলনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর না। তাই কাজ শেষ হওয়া খালগুলোর দায়িত্ব যদি সিটি কর্পোরেশন বুঝে নেয়, তবে আলাদা করে আমাদের মাটি উত্তোলনের কাজ করতে হবে না। সেটার বিপরীতে সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
এদিকে সিডিএর অবৈধভাবে ভবন অনুমোদনের বিষয়ে হাসনী বলেন, ‘ওনারা পরিদর্শন ছাড়াই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছেন। আমার এলাকায় একটা ১০ তলা ভবনের অনুমোদন দিয়েছে। কাগজে আছে ৬ মিটার, কিন্তু বাস্তবে সেখানে রয়েছে ৪ মিটার। এখন আমার প্রশ্ন সিডিএ কিভাবে ৪ মিটার রাস্তার ওপর ১০ তলা ভবন করার অনুমতি দিয়েছেন?’
ভবন নির্মাণের অনুমতির সময় সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ওনারা না আমাদের কিছু জানান, না আমাদের মেয়র সাহেবকে?’
এ সময় স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রতি ভবন নির্মাণে স্থানীয় কাউন্সিলর ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের অনুরোধ জানান হাসনী।
হাসনীর বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা নিজেরা নিজেরা সমন্বয় করে কাজ করেন। আমিতো আর এটার জন্য নতুন করে আইন করবো না। আপনি ভালো কাজ করলে মানুষ কেন আপনাকে সমর্থন করবে না, আপনারা নিজেরা নিজেরা সমন্বয় করে কাজ করুন।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে সকল সংস্থাকে এক হয়ে সমন্বয় করে কাজ করার অনুরোধ জানান মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিতে হলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ভূমিকা রাখতে হবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, সহযোগী সহস্থাসমূহ এবং জনগণকে।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের যে রাজস্ব আয় আছে, তা থেকে ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনেকগুলো জনসেবামূলক প্রকল্প পরিচালনা করছে। এগুলো পরিচালনার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেলে সিটি কর্পোরেশন স্বাবলম্বী হবে, বাড়াতে পারবে সেবা কার্যক্রম।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় করে, তা যাতে কোনো চাপ তৈরি না করে, সেজন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে। বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি রুটিন ওয়ার্কগুলো যাতে ভালভাবে হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’
সভায় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে সম্পাদিত ও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরেন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী, মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদসহ প্যানেল মেয়রবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দ ও বিভাগীয় সভাপতিবৃন্দ, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহসহ চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএস/ডিজে