চট্টগ্রামে দুই ডাক্তারকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠলো মানববন্ধন থেকে

স্বাস্থ্যসেবায় নৈরাজ্য

চট্টগ্রাম নগরজুড়ে এখন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না মানুষ। চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবার এ জিম্মিদশার জন্য দুই ডাক্তারকে দায়ী করে তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়েছে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে।

বৃহস্পতিবার ( ৪ জুন) চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের উদ্যোগে নগরীর জামালখানে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এমন দাবি জানিয়েছেন।

বক্তারা বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক— একদিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, আবার অন্যদিকে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক। কিছু চিকিৎসকের দুই ধরনের ভূমিকার কারণে মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে না, আবার বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েও জিম্মি। সরকার সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে সকল রোগীদের সেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের কিছু বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক ও কতিপয় বিএমএ নেতার যোগসাজসে প্রশাসনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে আসছেন। কোভিড পরীক্ষার রেজাল্ট প্রদর্শন, করোনা সেবা দিলে সাধারণ রোগীদের অসুবিধা হবে— এমন সব অজুহাতে কোন রোগী ভর্তি না করে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পুরো চট্টগ্রাম নগরজুড়ে এখন চিকিৎসা সেবার জন্য হাহাকার চলছে।

চট্টগ্রামে দুই ডাক্তারকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠলো মানববন্ধন থেকে 1

তারা বলেন, চট্টগ্রামে যেন বাংলাদেশের মানচিত্রের বাইরের কোন একটি শহর। যে নগরে কোন চিকিৎসাসেবা নেই। যেখানে ডাক্তারেরা কসাইয়ের ভূমিকা নিয়েছে। হাসপাতালগুলো কসাইখানাতে পরিণত। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য পথে পথে ঘুরছেন। চিকিৎসকরা সরকারকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করছেন।

ব্ক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের চিকিৎসাসেবা জিম্মি সিন্ডিকেটের মূল হোতা ডা. ফয়সাল ইকবাল ও ডা. লিয়াকত আলী খানকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

বক্তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ক্লিনিকে সেবা পেতে রোগীদের ভোগান্তি, হয়রানি, সেবা না পাওয়া, লাগামহীন ও গলাকাটা সেবা মূল্য আদায়, স্বাস্থ্য সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে নজরদারির অভাব রয়েছে। এসব বিষয়ে হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিলেও কখনো সফল হয়নি। জেলা-উপজেলা হাসপাতালে রোগীদের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে একটি অকার্যকর উপদেষ্টা কমিটি থাকলেও বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলির সেবার মান ও রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে ঢাকায় অধিদপ্তর ছাড়া স্থানীয়ভাবে কোন তদারকির ক্ষমতা নাই। আবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে তদারকি কমিটিতে ভোক্তাদের প্রতিনিধি অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। ফলে কিছু সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি ক্লিনিক মালিক এবং বিএমএর নেতারাই মিলে তাদের মতো করেই রোগীদের ভোগান্তি তদারকি করছেন যা অন্তসারশূন্য।

বক্তাগন অনতিবিলম্বে করোনা ও সাধারণ রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে বেসরকারি ক্লিনিকগুলিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোগান্তি নিরসন কমিটিকে মাঠপর্যায়ে তদারকি করে তার ফলাফল নগরবাসীকে দৈনিক অবহিতকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত সকল পক্ষের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণমূলক স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়ন করা, সেবা কর্মকান্ডকে নাগরিক পরিবীক্ষণের আওতায় আনা, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেশীয় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়।

অন্যথায় বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ঘেরাও, পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে অবস্থান ধর্মঘট, ক্লিনিক বয়কট করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!