চট্টগ্রামে দিনভর সিএন্ডএফ এজেন্টদের হট্টগোল, পিছু হটলো কাস্টমস

বিদেশে অর্থ পাচার ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির সাথে আমদানিকারকের পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও সমানভাবে দায়ী এবং তাদের বিরুদ্ধে আমদানিকারকদের মতো আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার। গত ১২ জানুয়ারি এই চিঠি পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজস্ব ফাঁকি রোধ এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। চিঠির খবর পেয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন একজোট হয়ে হঠাৎ করেই কর্মবিরতি পালন শুরু করে।অবশেষে তাদের দাবি মানতে হলো কাস্টম কমিশনারকে। তবে কী কী দাবি মানা হয়েছে সে ব্যপারে কাস্টম কমিশনারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সারাদিন কর্মবিরতি ও কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে মিছিলের পর বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় কাজে ফিরেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে আবার সচল হয়েছে কাস্টমস হাউস। দাবি আংশিক মেনে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের আবার কাজে ফিরিয়েছেন কমিশনার।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় কাস্টমস কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে কাজে যোগ দেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। ওই বৈঠক ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলে।

কাস্টম সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কৌশলে রাজস্ব আয় কার্যক্রমকে জিম্মি করে দিনভর অচল করে রাখে কাস্টম হাউস। পরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বৈঠকে বসে আন্দোলনকারীদের সাথে। আলোচনা শেষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অযৌক্তিক দাবি মেনে নিলে সন্ধ্যার দিকে কাজে যোগ দেয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। এরপর থেকে সচল হয় কাস্টম হাউস। একদিন বন্ধ থাকায় কাস্টমস হাউসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে পিছিয়ে পড়েছে কাস্টমস হাউস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, ‘অনিয়মের সাথে আমদানিকারক জড়িত থাকলেও সিঅ্যান্ডএফ জড়িত থাকে না। ফলে ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা বলেছি, প্রথম দফা কায়িক পরীক্ষার পর দ্বিতীয় দফায়ও যদি একই পরিমাণ অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিন, জেল-জরিমানা করে আমাদের কোন তদবির বা আপত্তি নেই থাকবেও না।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনারসহ সবাই আমাদের ৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন। আর যে চিঠি দিয়েছেন সেটি আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন। এরপর আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি।’

কাস্টম হাউস থেকে এনবিআরে পাঠানো আরেক চিঠিতে কমিশনার বলেছেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান যে পরিস্থিতি এবং তা উত্তরণের যে সুপারিশ করা হয়েছে তা এ খাতের সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এবং এফবিসিসিআই প্রতিনিধি সমন্বয়ে পর্যালোচনা সভা করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’

কাস্টমস সূত্র বলছে, আন্দোলনে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের নেপথ্যে মূল দাবি ছিল কাস্টমস কমিশনারের পাঠানো চিঠি প্রত্যাহার করা। কারণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে কমিশনারের পাঠানো চিঠির সদুত্তর মিললে অসাধু আমদানিকারক ও তাদের সাথে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অবৈধ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সিদ্ধান্ত আসার আগেই দুটি সংগঠন একজোট হয়ে আন্দোলন শুরু করে।

কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার কাজী জিয়া উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যদি কোন কমিশনার অনিয়ম রোধে কঠোর হন, চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন, রাজস্ব ফাঁকি রোধে পদক্ষেপ নেন তখনই কোন ছুঁতোয় আন্দোলন ডেকে বসে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। এমন হট্টগোল করা তাদের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারা কমিশনারকে কটাক্ষ করে কটু ভাষায় যে মিছিল দিয়েছে এটা মোটেও উচিত ছিল না।’

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!