চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীদের সামনে নতুন আতঙ্ক হাইপোটেনশন, অবহেলায় বাড়ছে মৃত্যু

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। এর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এবার ডেঙ্গুর ‘এক্সপান্ডেড সিনড্রোম’র সঙ্গে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে হাইপোটেনশন বা নিম্ন রক্তচাপ। মারা যাওয়া নারীদের বেশিরভাগই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেছে।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন, জেনেটিক কারণে নারীদের ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার হার বেশি। এছাড়া গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবকালে কোনো নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদেরও মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। এক্সপান্ডেড সিনড্রোমের মধ্যে রোগীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রেসার কমে যাচ্ছে এবং শকে চলে যাচ্ছে। ফলে প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে এবং রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। মূলত নারীদের অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। সংসারের চাপে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখেন না তারা। তাদের যখন ডেঙ্গু জ্বর হয় তখন সাধারণ জ্বর মনে করে সময়ক্ষেপণ করেন। আর এতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে মৃত্যুদশায় চলে যায় রোগী।

১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বায়েজিদের বাসিন্দা কামরুন নাহার মুক্তাকে (৪৬)। কিন্তু ওইদিনই রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার রোগের কেস হিস্ট্রিতে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস, হাইপোভোলুমিক শক, এক্সপানডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম ও হাইপোটেনশনের কথা লেখা ছিল।

মুক্তার ছেলে আলী নেওয়াজ মুক্তাকিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মায়ের অনেক আগে থেকেই প্রেসারের সমস্যা ছিল। নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খেতেন আমার মা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, এটি শুনে উনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বারবার বলতে থাকেন, তিনি বাঁচবেন না। শহরে একজন স্পেশালিস্ট ডাক্তারকে দেখানো হয়। তিনি আমার মাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করাতে বলেন। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি করানোর পর ডাক্তাররা মায়ের পালস পাচ্ছিলেন না, শকে চলে গিয়েছিলেন। ক্যাথাটার লাগিয়েও মায়ের প্রস্রাব হয়নি। পরে আইসিইউতে নেওয়া হলে সেখানেই মারা যান তিনি।’

৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শান্তা নামে এক নারী মৃত্যুর হয়। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর শান্তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল।

একইদিন বিকালে ডেঙ্গুতে মারা যান শাকিলা আকতার (২৬) নামে আরেক নারী। এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তাকে ৭ সেপ্টেম্বর চকরিয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এছাড়া সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে মারা যান উম্মে হানি আকতার (২২) নামে আরেক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়।

ডেঙ্গু মৃত এসব নারীদের এক্সপান্ডেড সিনড্রোমের সঙ্গে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা ছিল।

এদিকে এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে, তাদের প্রসব জটিলতা অন্য নারীদের চেয়ে বেশি দেখা দেয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৬ শতাংশ নারী মৃত সন্তানের জন্ম দেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এআরডিএস অর্থ ফুসফুসকে ইনভলভ করা। এটা সাধারণত কোভিডের ক্ষেত্রে হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুতেও এখন এটি হচ্ছে। এক্সপান্ডেড সিনড্রোম যখন দেখা দেয়, তখন রোগীর লিভার, কিডনি, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রেসার কমে যায়, রোগী শকে চলে যায়।’

ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে নারীরা তাদের যত্ন নেন। কিন্তু নিজে অসুস্থ হলে গুরুত্ব কম দেন। অসুস্থ হলে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তারা। এসব কারণে হাসপাতালেও দেরি করে আসেন। এ কারণে তাদের মৃত্যুর হারও বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শারীরিক কোনো সমস্যা দেখা দিলেই ডেঙ্গু কি-না, সেটি পরীক্ষা করা উচিত। আর অসুস্থ হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ জন। মারা গেছেন ১ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তর সংখ্যা ৮৬৫ জন। মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৭ জন এবং মারা গেছেন ৭ জন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm