চট্টগ্রামে মশার উপদ্রব দিনের পর দিন বাড়ছেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নানা উদ্যোগ নিলেও তাতে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাচ্ছে না। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এ নিয়ে মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
মশার উৎপাত বাড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রামে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে গত বুধবার (১৭ নভেম্বর) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানকার শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার ফাহিম রেজা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অন্যান্য বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রোগীর কম ছিল। এবছর শিশুদের মাঝেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। অনেকের আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। শুধু আমার ওয়ার্ডে এখন ডেঙ্গু নিয়ে ৭ জন ভর্তি আছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।’
এদিকে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চসিক মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। মশা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারায় আবার কেউ কেউ মেয়রের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন ফেসবুকে। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নিজ এলাকা বহদ্দারহাটের জীবন চৌধুরী ‘ডেসপারেটলি সিকিং চট্টগ্রাম’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে মশার ছবি দিয়ে লিখেন,
“চট্রগ্রামের মাননীয় মেয়র….আমি বহদ্দারহাট পশ্চিম ফরিদাপাড়া থেকে বলতেছি… মশার উপদ্রব এতটাই বেড়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয় আমাদের শহরে মশার চাষ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এর উৎপাত বেড়েই চলছে। অসহ্য কর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় প্রতিদিন আঁধার নেমে আসতেই। আশা করি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুতই এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিবে। আমি বিশেষ করে আমাদের বহদ্দারহাট সিটি কর্রপোরেশনের কোন ভাই-বদ্দা থাকলে উনাকে বলতেছি, আল্লাহর দোহাই লাগে মশা কেমনে তাড়াবেন এই ব্যবস্থা করেন, অনেক দোয়া পাবেন পুরো শহরে মশার স্প্রে করুন, আবার শহরে অনেকে জায়গায় রাতের বেলায় বিদুৎ থাকে না, যার কারনে মশার উপদ্রবটা প্রচুর, মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে মশা, প্লিজ কিছু একটা করুন।”
ওই পোস্টে হাজারেরও বেশি মানুষ নিজেদের প্রতিক্রিয়া দেখান। আসিফ আহমেদ নামের একজন মন্তব্যে লিখেন, ‘মশার উপদ্রব বেশি, এমনটা গত কয়েকবছর দেখিনি। দয়া করে ব্যবস্থা নিন।’
তাসনোভা তাবাচ্ছুম নুসরাত নামের একজন লিখেন,‘পুরো ফরিদের পাড়ার জন্য কিছু একটা ব্যবস্হা করা উচিৎ। বেলা তিনটার থেকেই এদের অত্যাচার একটু একটু বাড়তেই থাকে। সন্ধ্যা হলে তো কথায় নেই। মশার কয়েল জ্বালায় কিন্তু কয়েলের ঘ্রাণে আমাদের অবস্থা খারাপ হলে ও ইনারা (মশা) বিন্দাস। এতো মশা যে কোত্থেকে আসে। তারপরও সিটি করপোরেশন এর প্রতি বিনীত অনুরোধ কিছু একটা করুন।’
মশা নিয়ে আবার কেউ কেউ মেয়রকে উদ্দেশ্য করে তীর্যক মন্তব্যও করেন। মশার ছবিকে ইঙ্গিত করে চৌধুরী পারভেজ লিখেন, ‘এগুলা রান্না করে মেয়রকে পাঠাই দাও।’ আসরার তানিম নামের একজন লিখেন, ‘এই শহরে মেয়র নাই, যা আছে তা হলো গুজব।’
কেউ কেউ আবার চট্টগ্রাম শহরের মশার উৎপাত নিয়ে হাস্যকর মন্তব্যও করেছেন। মেয়রকে উদ্দেশ্য করে মিজান রহমান নামের একজন লিখেন, ‘আজ আমাদের মাঝে মনে হয় মরহুম রেজাউল করিম চৌধুরী বেঁচে থাকলে চট্টগ্রামের এইরকম বাজে অবস্থা কখনো হতো না। আসুন সবাই মিলে উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
এতোদিন মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এডাল্টিসাইড-লাইট ডিজেল অয়েল (এলডিও) নামক কীটনাশক ছিটিয়ে আসছে, তার কার্যকারিতা খুব কম বলে দাবি করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এর পর মশা নিধন করতে সিটি করপোরেশনের অনুরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ করে কিটনাশকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছিল।
মশানিধনে শতভাগ কার্যকর দাবি করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির দেওয়া ভেষজ কিটনাশক ব্যবহার করে আসছে চসিক। এতেও কমেনি মশা। বরং আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে দাবি নগরবাসীর।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরএম/এমএহক