অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কালো থাবায় মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিমও। চট্টগ্রামে ডিম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে হু হু করে বাড়ছে দাম। এর মধ্যে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দামসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ব্যয় না বাড়া সত্ত্বেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গাড়ি প্রতি ডিমের দাম বাড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীদের এমন বাড়তি মুনাফালোভী আচরণে নগরে ডিমের দাম প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা এর ফায়দা লুটছে বলে মনে করছেন অনেকে।
নগরের বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকা। ফলে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১৪৪ টাকা থেকে ১৫৬ টাকা। অন্য দিকে পাইকারী বাজারে প্রতি একশ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৬০-১৭০ টাকা। অথচ গত মাসেও খুচরা বাজারে ডিমের দাম ছিল প্রতি পিস ১০ টাকা। পাইকারী বাজারে এ দর ছিল ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। সম্প্রতি বিয়ে, পিকনিকসহ নানা আয়োজন বাড়ার ফায়দা নিতে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ ক্রেতারা।
চকবাজার এলাকার ক্রেতা মো. রফিক বলেন, দেশে কখন কোন জিনিসের দাম বাড়তেছে বোঝা বড় দায়। মূলত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের নিয়ে ছেলে খেলা শুরু করেছে দেশে। তারা ব্যবসাকে ব্যবহার করে কারণে-অকারণে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের টাকা মেরে খাচ্ছে। ডিম হচ্ছে মানুষের খাবারের তালিকায় অতি গুরুত্বপুর্ণ ও নিত্যদিনের একটা খাদ্যদ্রব। এবার ব্যবসায়ীদের কুনজর ডিমের উপর পড়েছে। দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রবাহের ফাঁকফোকরের মধ্যে সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা হুটহাট এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে অন্যায়ভাবে নিজেদের পকেট ভারী করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মাসের ব্যবধানে নগরে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। সাধারণত ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য গাড়ি ভাড়া বা মুরগীর খাবারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করে থাকেন। তবে এবার এসবের দাম বৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশ। গত এক মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বা মুরগীর খাবারের দাম কোনটাই বাড়েনি। মুরগীর খাবারের দাম সর্বশেষ বেড়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। এছাড়া দেশে জ্বালানি তেলের দামও সর্বশেষ বেড়েছিল গত বছরের ৫ আগস্ট। সেদিন রাত বারটা থেকে কার্যকর হওয়া জ্বালানি তেলের বাড়তি দামকে ঢাল বানিয়ে ৫-৭ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিপরীতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ডিমের দাম গাড়ি প্রতি বাড়িয়েছিল প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। তবে সেবছর আগস্ট মাসের প্রথম ভাগে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে অস্থির হয়ে উঠা ডিমের বাজার একই মাসের শেষভাগে এসে দাম কমিয়ে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় সরকার।
চট্টগ্রামে ডিমের বড় বাজারখ্যাত পাহাড়তলী বাজারের ডিমের আড়তদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবদুল সাত্তার পোল্ট্রির ব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নিয়মিত টাঙ্গাইল থেকে ডিম সরবরাহ করি। গত কয়েকদিন ধরে ওখানে প্রতিদিনই ডিমের দাম বাড়তি ছিল। গতকালকে টাঙ্গাইল থেকে আমরা আড়তে ডিম এনেছি ১ হাজার ৫০ টাকা (প্রতি একশ) ধরে। এর মধ্যে কোন কোন দিন আমরা কেনা দামের চেয়েও কম দামে লোকসান নিয়েই ডিম সেরে দিই বাজারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমি কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিবো।
জেডএন/এমএহক