চট্টগ্রামে ঠান্ডা মাথায় আইনজীবী খুনে একদল দুর্বৃত্ত, আক্রমণ হয় অতর্কিতে

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় আইনজীবী খুনে জড়িত ছিল সংঘবদ্ধ একদল দুর্বৃত্ত। অতর্কিতে সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, খুনিরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী ও ইসকনের সঙ্গে জড়িত।

চট্টগ্রামে ঠান্ডা মাথায় আইনজীবী খুনে একদল দুর্বৃত্ত, আক্রমণ হয় অতর্কিতে 1

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ধারালো অস্ত্রধারী সন্দেহভাজন খুনিদের ছবিও। চট্টগ্রাম প্রতিদিন এসব তথ্য আলাদাভাবে যাচাই করে দেখেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে বেরিয়ে সড়কের উল্টোপাশে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ধারালো অস্ত্রধারী অজ্ঞাতপরিচয় একদল যুবক তাকে টেনেহিঁচড়ে পার্শ্ববর্তী রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। এডভোকেট সাইফুল হাত, মাথা ও পায়ে গুরুতর আঘাত পান।

মুমূর্ষূ অবস্থায় সাইফুলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীরা চট্টগ্রাম আদালত ভবনে জড়ো হয়েছিল।

নিহত আইনজীবী সাইফুল তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইফুল ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হওয়ার পর তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধিত হন। সাইফুলের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় যাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে শ্রীবাস দাশ, শারকু দাশ, ছোটন, সুজিত ঘোষ, উৎপল ও এনামুল হক নামে ছয়জনের নাম জানা গেছে।

সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রামের চারজন ফটো সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। এরা হলেন— দেশ রূপান্তরের আকমাল হোসেন, বিডিনিউজের সুমন বাবু, আমাদের সময়ের আবু সাঈদ মোহাম্মদ তামান্না ও সারাবাংলার শ্যামলনন্দী।

এর আগে সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে মহানগর হাকিম ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে তোলা হয়।

শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে চিন্ময় কৃষ্ণকে প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। তবে তার অনুসারীরা এ সময় বাধা দিলে প্রিজনভ্যানটি প্রায় তিন ঘন্টা সেখানে আটকে থাকে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে বিকেল তিনটার দিকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আন্দোলনকারী এ সময় আদালত এলাকার একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করে। পুলিশও এ সময় কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। লাঠিচার্জও করে। পরে চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পেছনে দেশের ভেতরে-বাইরে থেকে ইন্ধন থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পেছনে দেশের বাইরের এবং দেশের ভেতরের দু-একটি পার্টি আছে, তাদের ইন্ধন থাকত পারে। এ ছাড়া যাদের ব্যান (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে, তাদের থেকেও হয়তো কিছুটা ইন্ধন আছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm