রহস্যজনক কারণে বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়ে বেসরকারি ট্রেন চালাচ্ছে রেলওয়ে। প্রতিদিন দেড় লাখ টাকা লোকসান দিয়ে রেল পূর্বাঞ্চলই শুধু দুটি ট্রেন পরিচালনা করছে। সাগরিকা এক্সপ্রেস ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে এ দুটি ট্রেন রেলকে দৈনিক ভাড়া দিচ্ছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। কিন্তু বিনিময়ে রেল থেকে প্রতিদিন ডিজেল নিচ্ছে ৩ লাখ ৩ হাজার টাকার। অর্থাৎ, শুধু জ্বালানিখাতেই রেলওয়ে লোকসান গুণছে দিনে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি ড্রাইভার, গার্ড, স্টেশন মাস্টার, রেল লাইন সংস্কার, মবিল সব খরচই বহন করছে রেলওয়ে।
তবে, সব খরচ রেলওয়ের ওপর চাপালেও রেলের টিকেট বিক্রির টাকা ঠিকই নিজেদের পকেটে ভরছে বেসরকারি সংস্থা দুটি। এমনকি, রেলের কাউন্টারে বসেই টিকেট বিক্রি করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুটির লোকজন।
জানা যায়, বেসরকারি ট্রেন সাগরিকা এক্সপ্রেস দিনে ৮১ হাজার টাকা ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা দেয় রেলওয়েকে। বিনিময়ে রেলওয়ে দৈনিক সাগরিকায় ১ হাজার ৯২০ লিটার ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে ১ হাজার ৮৭০ লিটার ডিজেল সরবরাহ করছে। যার বাজার মূল্য যথাক্রমে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা।
যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রিতে নিজস্ব লোক ছাড়া বাদবাকি সবই রেলওয়ে বহন করে। ড্রাইভার, গার্ড, জ্বালানি, মবিলের খরচ রেলওয়ের। মাসে অর্ধকোটি টাকা লোকসান দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এমন সুবিধা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রেল পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী লোকোশেড, ডিজেল শাখার এসএসএই রাজেন্দ্র নাথ জানান, দৈনিক বেসরকারি ট্রেন দুটি গড়ে ১৮শ’ লিটার করে ডিজেল সরববাহ করছে। পাহাড়তলী লোকোশেড, ডিজেল শাখার ৪ দিনের হিসাব (৭ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর) সাগরিকা কর্ণফুলী ট্রেনে ডিজেল সরবরাহের পরিমাণ যথাক্রমে কর্ণফুলী একাসপ্রেসে ১ হাজার ৯২০ লিটার, ১ হাজার ৮৫০ লিটার, ১ হাজার ৯৭০ লিটার ও ১ হাজার ৭৮০ লিটার। আর সাগরিকায় ১ হাজার ৮৫০ লিটার, ১ হাজার ৮২০ লিটার, ১ হাজার ৮৮০ লিটার এবং ১ হাজার ৮৭০ লিটার।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ২০২০ সাল থেকে সকল বেসরকারি ট্রেনের সাথে রেলের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। নতুন করে রেল চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে না। তবে মন্ত্রীর সেই কথা ‘কথার কথা’ হয়ে থেকে গেল। ৩৭টি বেসরকারি ট্রেন চলছে এখনও।
রেলওয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দৈনিক চুক্তিতে পূর্বের প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি রেল পরিচালনা করছে। দৈনিক ভিত্তিতে এসব ট্রেন পরিচালনার জন্য রেলওয়ে নতুন করে কোন দরপত্র আহবান করেনি। চট্টগ্রাম থেকে ২টি ট্রেন সাগরিকা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম-চাঁদপুর ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম-ঢাকা চলাচল করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের আয় ১ হাজার ৫৯০ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয় ১ হাজার ২০০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে আয় কমেছে ৩৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
রেল পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘এ বিষয়টি এ মুহূর্তে আমার স্মরণ নেই।’ তিনি বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কাছ থেকে জেনে নেওয়ার অনুরোধ করেন।
বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পূর্ব) আনসার আলী চুক্তির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সর্দার শাহাদাত আলী বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে নিজস্ব রেলের পাশাপাশি বেসরকারি ট্রেনও চালাতে হচ্ছে।’
কেএস/এমএহক