চট্টগ্রামে ‘টাইগার’ মুশফিকের গর্জনে খুলনার দাপুটে জয়

প্রথম ম্যাচেই রানউৎসব

ব্যাটিংয়ের জন্য চট্টগ্রামের উইকেটের সুনাম পুরনো। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এবারের আসরের প্রথম ম্যাচটাই হলো রান উৎসবের। তবে ১৯০ রান তাড়া যেকোনো উইকেটেই খুব সহজ না। তার জন্য চাই ভাল শুরু। সেটা হয়নি খুলনার। প্রথম ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত বোল্ড হয়ে যান আন্দ্রে রাসেলের বলে। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা রাহমানুল্লাহ গুরবাজকে বাড়তে দেননি আফিফ। ২৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দল ঘুরে দাঁড়ায় মুশফিক-রাইলি রুশোর জুটিতে। রুশো খেলছিলেন বলের মেরিট বুঝে। মুশফিক নেমেই হন চড়া। তাতে তরতরিয়ে বাড়তে থাকে রান। চেনা স্লগ সুইপ, সুইচ হিট, তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে এসে উড়ানো। মুশফিকের ব্যাটে দেখা গেছে সব জৌলুস। তাতে করে ম্যাচ জিততে শেষ ৩৬ বলে চাই ৬৪ রান। বেশ কঠিনই মনে হচ্ছিল শেষের এই টার্গেটকে। কিন্তু মুশফিক রহিম যখন উইকেটে ব্যাট হাতে, তখন আস্থা রাখতেই পারে যেকোনো দল। ৫১ বলে ৯৬ রান করে মুশফিক রহিম আরেকবার সেই আস্থারই প্রতিদান দিলেন। খুলনাকে ৫ উইকেটে জেতালেন দুর্দান্ত ব্যাটিং করে।

শোয়েব মালিকের ঝড়ে বড়সড় সংগ্রহই পেয়েছিল রাজশাহী রয়্যালস। রান তাড়ায় খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম হয়ে উঠেন বিস্ফোরক। তার তাণ্ডবে মামুলি হয়ে গেল বড় লক্ষ্যও। এক পর্যায়ে খেলা জিততে ৪ বলে জিততে খুলনার দরকার ২ রান। সেঞ্চুরির জন্য মুশফিকের দরকার ৪। বাউন্ডারি মেরে খেলে শেষ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফেরেন মুশফিক। তবে তার আগে কাজের কাজ করে দিয়ে যান তিনি। অধিনায়কের তৈরি করা মঞ্চে পরের বলেই চার মেরে খেলা শেষ করেছেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক।

রাজশাহী রয়্যালসের ১৮৯ রানের বিশাল স্কোরকে খুলনা টাইগার্স টপকে গেলো ব্যাটিংয়ে গর্জন তুলে। রাইলি রুশো ও মুশফিক রহিমের তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭২ রান খুলনাকে জয়ের পথ দেখায়। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিক ও শামসুর রহমানের গড়া ৬১ রান জয়ের স্বপ্নটা আরো উজ্জ্বল করে। আর খুলনার দুর্দান্ত এই জয়ে ফিনিশিং টানেন ব্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়া মুশফিকুর রহিম। তার ৯৬ রান চলতি টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। বিপিএলের ইতিহাসে কোনো উইকেটকিপারের সর্বোচ্চ স্কোর। শেষ ওভারে ৯৬ রানে মুশফিক যখন আউট হলেন তখন ম্যাচ জিততে খুলনার চাই মাত্র ২ রান। উইনিং হিটটা নিলেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক।

খুলনার জয়ের পথে ক্যারিয়ারসেরা ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: আজীম অনন
খুলনার জয়ের পথে ক্যারিয়ারসেরা ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: আজীম অনন

তার আগে মুশফিকের কল্যাণে খুলনার জয় তখন সময়ের ব্যাপার। তখন খেলার ফলের চেয়ে বরং মুশফিক সেঞ্চুরি করতে পারবেন কিনা এই নিয়েই শেষ দিকে তৈরি হয় কৌতুহল। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে যেতে না পারলেও এমন ইনিংস খেলায় খুব একটা অতৃপ্তি থাকার কথা না মুশফিকের।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে শুরুতেই হযরতুল্লাহ জাজাইকে হারায় রাজশাহী। ছন্দে থাকা লিটন দাস খেলছিলেন দারুণ। মোহাম্মদ আমিরকে ছক্কা-চার মারার পর রবি ফ্রাইলিঙ্ককে উড়াতে গিয়ে রাইলি রুশোর দারুণ ক্যাচে পরিনত হন তিনি।দুই ছক্কা মেরে আফিফ থামেন শহিদুল ইসলামের বলে। ৬৬ রানে ৩ উইকেট হারানো রাজশাহী ঘুরে দাঁড়ায় শোয়েব মালিকের ব্যাটে। উইকেটে থিতু হয়ে ৩৪ বলে ফিফটি করে আরও বিস্ফোরক হয়ে উঠে তার ব্যাট। চতুর্থ উইকেটে রবি বোপারার সঙ্গে জমে উঠে জুটি। ওভারপ্রতি দশের উপর রাত তুলে ১০৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ৫০ বলে ৮৭ রান করা মালিক আমিরের বাউন্সারে স্কয়ার লেগে ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি।

বোপারা অবশ্য আর আউট হননি। ২৬ বলে দুটি করে চার-ছক্কা মেরে ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেল শেষ ৯ বলের জন্য নেমে অপরাজিত থাকেন ১৩ রানে। টসের সময় রাসেল বলছিল ১৯০ রানের মতো করতে পারলে খেলা জিততে পারবেন তারা। সে পর্যন্তই গেলেন তারা। কিন্তু মুশফিকের সেরা দিনে ওই রান আর টিকল না তাদের। ৮ বোলার ব্যবহার করেও কোন সুরাহা করতে পারেননি রাসেল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৮৯/৪ (জাজাই ১, লিটন ১৯, আফিফ ১৯, শোয়েব ৮৭, বোপারা ৪০*, রাসেল ১৩* ; মিরাজ ০/১৭, আমির ২/৩৬, ফ্রাইলিঙ্ক ১/২৯, শফিউল ০/৩৮, শহিদুল ১/৩৫, আমিনুল ০/৩০ )
খুলনা টাইটান্স: ১৯.৪ ওভারে ১৯২/৪ ( শান্ত ০, গুরবাজ ৭ , রুশো ৪২, মুশফিক ৯৬, শামসুর ২৯, ফ্রাইলিঙ্ক ১৪*, শহিদুল ০* ; রাসেল ২/৪১ , রাব্বি ১/১৮, ১/২৪, জায়েদ ০/৭, মালিক ০/১৪, বোপারা ১/৩২, অলক ০/৩১, তাইজুল ১/১১, রেজা ০/১৪)
ফল: খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।

ksrm