চট্টগ্রামে টনে টনে পেঁয়াজ যাচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে, পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

পেঁয়াজের জন্য বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর। ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলে বাংলাদেশে অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। ২০১৯ সালে ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে দেশের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি ৩০০ পর্যন্ত দাম উঠলেও এবার তা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় ছিল। পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমূখী দেখে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এই সুযোগে লোভে পড়ে অনেক অনভিজ্ঞ ব্যক্তিও পেঁয়াজ আমদানিতে নেমেছেন বলে খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ফলে এখন টনে টনে পেঁয়াজের স্থান হচ্ছে ময়লার ভাগাড়। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়ে গেছেন। যার প্রভাব সামনে আরও করুণ হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।

খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স বাঁচা মিয়া সওদাগর নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ইদ্রিস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়তে দেখে অনেক লোহা ব্যাপারীও পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। পেঁয়াজের যা চাহিদা তার থেকে বেশি পেঁয়াজ দেশে এসেছে। যার কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। যে পেঁয়াজ আমাদের কেনা ৫৫ টাকা, সেই পেঁয়াজ আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আমাদের এই পুঁজি হারানোর ক্ষতিপূরণ কোত্থেকে আসবে?’

চট্টগ্রামে টনে টনে পেঁয়াজ যাচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে, পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা 1

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর বাংলাদেশে বিকল্প উৎস হিসেবে মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে কেনা পেঁয়াজ পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩২ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা, মিশর ও চীনের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৬ টাকা।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা আফসার উদ্দিন জানান, আমদানিকারকদের প্রতি কন্টেইনারে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। পেঁয়াজের এই সংকটময় মুহূর্তে যেসব ব্যবসায়ী পুঁজি হারাচ্ছেন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে শুরু করে। এর মধ্যে গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭৮টি আবেদনের প্রেক্ষিতে মোট ২ লাখ ৬ হাজার ৭৮৮ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। আমদানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পেঁয়াজ ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে আসতে শুরু করে। সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ দিনে ৪৮ হাজার ৩৮৯ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে। এছাড়া ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে ৭ হাজার টন পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ঝুঁকছে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৪ টন পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। তবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে নেই বলেও তিনি জানান।

এদিকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে ক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দেশব্যাপী ট্রাক এবং ই-কমার্সের মাধ্যমেও পেঁয়াজ বিক্রি করছে। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে প্রতি কেজি ৩০ টাকা মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এতদিন বাঙালি ভারতের উন্নতমানের পেঁয়াজে অভ্যস্ত হওয়ায় টিসিবির এসব পেঁয়াজেও আগ্রহ খুব একটা নেই। যারা টিসিবির পেঁয়াজ নিচ্ছেন তারা এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিচ্ছেন।

আমদানির অনুমতি দেওয়া মোট পেঁয়াজের চার ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছেছে। এতেই টনে টনে পেঁয়াজ পচে ময়লার ভাগাড়ে যাচ্ছে। এদিকে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসছে। পচনশীল এই দ্রব্য এখন আমদানিকারকদের দিশেহারা করে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারত থেকে আমদানি করলে খাতুনগঞ্জ পেঁয়াজ এসে পৌঁছায় মাত্র এক সপ্তাহে। এখন যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে সেখান থেকে দেশে আসতে সময় লাগছে কমপক্ষে ২০ দিন। ফলে পেঁয়াজের সহনশীল তাপমাত্রা থেকে বেশি তাপমাত্রা হলে পচে যাচ্ছে, আবার কম তাপমাত্রা হলে পেঁয়াজে চারা গজিয়ে যাচ্ছে। মূলত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অন্যরা বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হচ্ছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!