চট্টগ্রামে ‘জিনের ব্যবসা’, ৩ জন ‘স্বর্ণমূর্তি’সহ বাকলিয়ায় ধরা

‘জিনের বাদশা’ মইদুল ইসলাম। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার শিষ্যরা। সর্বশেষ শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হন মইদুলের তিন শিষ্য। আটককৃতরা হলেন গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আবছার আলী সরকারের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম, তবিবুর রহমানের ছেলে মো. মুক্তার রহমান ও স্বপন চন্দ্র মহন্তর ছেলে শীপন চন্দ্র মহন্ত।

তারা জানায়, এখনও সক্রিয় আছে মইদুলের ১০টি টিম। শিষ্যরা আটক হয়, গুরুও আটক হয়। রিমান্ড হয়, জিজ্ঞাসাবাদ হয়। উদ্ধার হয় হাতিয়ে নেওয়া টাকা কিংবা স্বর্ণালংকারও। গুরু-শিষ্য কারাভোগ করে, জামিন হয়। জামিনে বের হয়ে পুনরায় ‘লাভজনক’ সেই ব্যবসায় ফিরে যায় মইদুলরা।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গৃহবধু রোকেয়া বেগমের (ছদ্মনাম) স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিনের বাদশার তিন সহযোগীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কথিত স্বর্ণমূতিও উদ্ধার করা হয়। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গাইবান্ধার মইদুল ইসলাম তাদের দলনেতা। সারা দেশে তাদের কমপক্ষে ১০টি টিম সক্রিয় আছে এই প্রতারণার কাজে।

তিনি আরও জানান, ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের ওই গৃহবধুর কাছ থেকে স্বামী ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কথা বলে ৭৫ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাদের চরম ক্ষতি হবে— এমন শঙ্কার কথা জানায় ওই গৃহবধুকে। আপনজনের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তিনি ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন ওই চক্রের হাতে। একই কায়দায় একই চক্র ১৭ অক্টোবর হাতিয়ে নেয় ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এরপর ১৬ লাখ সাত হাজার টাকায় স্বর্ণমূর্তি কেনার প্রস্তাব দেয় তাদের কাছ থেকে। তখন ওই গৃহবধু প্রতারণার শিকার বুঝতে পেরে বিষয়টি স্বামীকে জানান। স্বামী থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ প্রতারকচক্রকে আটক করে।

ওসি নেজাম আরো জানান, মইদুল ও তার অপর সহযোগী আলমগীর পলাতক রয়েছে। তাদের আটকে শিগগির অভিযান চালানো হবে। আটককৃত তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক (পিবিআই) সন্তোষ কুমার চাকমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে দুই বছর আগে মইদুল ইসলাম ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীরকে গাইবান্ধা থেকে আটক করা হয়েছিল।

গাইবান্ধার গাবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাজারের সাকিব টেলিকম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মইদুল। তার সহযোগী জাহাঙ্গীরের প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, মোবাইল মেরামত, মোবাইল সিম বিক্রিসহ নানা সেবা প্রদান কর হতো। আর এসবের আড়ালে চলতো ‘জিনের বাদশা’ সেজে প্রতারণার ব্যবসাও। ওই সময় শনু মং মারমা নামের এক গাড়ি চালকের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল মইদুল ও জাহাঙ্গীর। শনু মং মারমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তখন তাদের আটক করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, জিনের বাদশার সহকারী পরিচয়ে ৯০ হাজার টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল হাতানোর দায়ে রুনা আক্তার প্রকাশ রহিমা বেগম নামের এক নারীকে গত ১১ জুলাই দুই বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম। রহিমা বেগমের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!