চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চড়েও চরম বেকায়দায়

মেনে নিতে পারছেন না নেতাকর্মীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে দুটি আসন ছেড়ে দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম-৫ ও চট্টগ্রাম-৮— এই দুই আসনেই জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সোলায়মান আলম শেঠকে পড়তে হচ্ছে কঠিন লড়াইয়ের মুখে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই কাজ করছেন দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। বিশেষ করে নগরীর চকবাজারের বাসিন্দা চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান শেঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তবে লাঙ্গলের সমর্থকরা এখনও আশায় আছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে নেতাকর্মীরা তাদের পক্ষেই মাঠে নামবে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পাচ্ছেন না ব্যারিস্টার আনিস। নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে তার সঙ্গে কেবল আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস গণি চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল আলম ও পরিবহন নেতা মঞ্জুরুল আলম মন্জু ছাড়া তেমন আর কাউকে তার সঙ্গে দেখা যাচ্ছেনা। এই আসনে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালামকে আর মাঠে দেখা যায়নি।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এক-তৃতীয়াংশ নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। বাকিদের বেশিরভাগই পালন করছেন নীরব ভূমিকা। নেতাকর্মীদের অনেকে আক্ষেপ করে বলেছেন, ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকলেও এই আসনে কখনোই দলীয় এমপি পাননি তারা।

ভোটের মাঠে এমন সব হিসাব সামনে রাখলে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে কঠিন লড়াইয়েই নামতে হচ্ছে। ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী সৈয়দ মনজুরুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছেন। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা নির্দেশনা অমান্য করতে পারে না। আমরা ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমাদের সাথে আছেন। হাতেগোনা কয়েকজন হয়তো বিরোধিতা করছেন। সময় হলে তারাও ফিরে আসবেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘১৯৭৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত হাটহাজারীতে আমরা দলীয় এমপি পাইনি। সে হিসেবে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মনে ব্যথা রয়েছে। শাহজাহান ভাই দলীয় লোক হিসেবে অনেকে তার পক্ষে কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীকেও দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে যার ইচ্ছেমত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারেন।’

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠকে সমর্থন দিয়ে সেখানে বর্তমান সাংসদ নোমান আল মাহমুদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান আলম শেঠকে
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের ভোটাররা সহজে মেনে নিতে পারছেন না। সোলায়মান শেঠ এমনকি ওই এলাকার ভোটারও নন।

এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নোমান আল মাহমুদকে সরিয়ে নেওয়া হলেও সোলায়মান শেঠকে লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরীর সঙ্গে। সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের এলাকায় তুলনামূলক ভালো অবস্থান রয়েছে। অন্যদিকে সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন ও বর্তমান সাংসদ নোমান আল মাহমুদ।

এর মধ্যেই কৌশলী জবাব দিয়ে বোয়ালখালীর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন বলেন, অনেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও আমরা এখনও কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জাতীয় পার্টিকে যেহেতু দল সমর্থন দিয়েছে, সে হিসেবে আমাদের তার পক্ষে কাজ করতে হবে। দু-একদিনের মধ্যে নাঙ্গলের প্রচারণায় সবাই মাঠে নামবো৷

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm