চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ও দেওয়ানবাজার এলাকার বেসরকারি ছাত্রীনিবাসগুলোতে থাকা ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীদের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। একই ঘটনা ঘটেছে বহদ্দারহাট-চান্দগাঁওয়ের ছাত্রীনিবাসগুলোতেও। বিকেলে এসে হঠাৎ করে এভাবে হোস্টেল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশের পর বিপুলসংখ্যক ছাত্রী ও কর্মজীবী নারী বিপদে পড়ে গেছেন।
এ সময় অনেক ছাত্রী ও কর্মজীবী নারী তাদের গ্রামের বাড়ি অনেক দূরে— এমন কথা জানালেও পুলিশ তাদেরকে আত্মীয়ের বাসায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। চাপের মুখে মাত্র কয়েক ঘন্টায় অনেক হোস্টেল বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। পুলিশ অবশ্য এমন চাপের কথা অস্বীকার করে বলেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন মামলার আসামি খুঁজতেই তারা এসব হোস্টেলে গিয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, দেওয়ানবাজার, বহদ্দারহাট-চান্দগাঁও এলাকায় অবস্থিত অন্তত ৩০টি ছাত্রীনিবাসে যায় পুলিশের একাধিক টিম।
জানা গেছে, বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চকবাজারের কলেজ গেট এলাকার বিভিন্ন হোস্টেলে যায় চকবাজার থানা পুলিশের একাধিক টিম। এ সময় পুলিশ সন্ধ্যার মধ্যে সব ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীকে হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অভিযানকালে চকবাজারে চট্টগ্রাম কলেজের আশপাশে মাতৃছায়া, মাতৃনীড়, মাতৃছায়া, আইডিয়াল, পরশমণি, মাতৃনিলয়, প্রশান্তি, প্যারেন্ট কেয়ার ও মহানগর মহিলা হোস্টেলসহ বেশ কয়েকটি হোস্টেলে যায় পুলিশ।
আরজিনা আকতার নামের এক ছাত্রী জানান, ‘ওরা রুমের সামনে এসে সুন্দর করে বলেছে—হোস্টেল খালি করেন, আমরা কিছুক্ষণ পর আবার আসব। হাতে থাকা ইয়া বড় মোবাইলে হ্যালো হ্যালো শব্দ গানের মত লাগছিল। এটাই আমার স্বাধীন দেশ!’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রীনিবাসের মালিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ১০ মিনিটের দিকে পুলিশের প্রায় ২০-২৫ জনের একটি দল আমার হোস্টেলে আসে। এ এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। পুলিশ এসে প্রথমে আমাকে ডাকে। এ সময় তারা বলে, আমার হোস্টেল থেকে কয়জন মেয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন? আমি তখন বলি, আমার হোস্টেল থেকে কোনো মেয়ে আন্দোলনে যায়নি। আমি প্রতিদিন হোস্টেলের গেট বন্ধ করে রেখেছিলাম।’
ছাত্রীনিবাসের ওই মালিক আরও বলেন, ‘পুলিশ বলেছে, আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার মধ্যে হোস্টেল থেকে সব ছাত্রীকে বাড়ি চলে যেতে হবে। বুধবার সকালের মধ্যে হোস্টেল যেন খালি হয়ে যায়। আমি তখন পুলিশকে বলি, মহেশখালী, চকরিয়া, বরিশালসহ দূর-দূরান্তের অনেক মেয়ে এ হোস্টেলে থাকেন; তারা কিভাবে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি যাবেন? তারপর দূরের কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে পুলিশের কথা হয়, তাদের বুধবার সকালের মধ্যে হোস্টেল খালি করে থাকতে বলেন।’
এদিকে আচমকা এসে হোস্টেল ছেড়ে দেওয়ার পুলিশি নির্দেশের পর বিপুলসংখ্যক ছাত্রী ও কর্মজীবী নারী বিপদে পড়ে গেছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা পড়ে গেছেন চরম ভোগান্তিতে। অনেকের বাড়ি দূরে জানালে পুলিশ তাদের আত্মীয়ের বাসায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
শুধু চকবাজার এলাকাতেই ছোট-বড় মিলে ২০টিরও বেশি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। সেখানে প্রায় ২০০০ ছাত্রীসহ কর্মজীবী নারীরা থাকেন। মূলত চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের বেশিরভাগ ছাত্রী এসব ছাত্রীনিবাস ও হোস্টেলে থাকেন।
এদিকে পুলিশ বলছে, চট্টগ্রামে সহিংসতার মামলায় ছাত্রীদের ধরতে পুলিশ হোস্টেলে যায়নি এবং হোস্টেল খালি করতেও বলেনি। এটি ছিল তাদের অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের একটি অংশ।
চকবাজার থানার চট্টগ্রাম কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক সারোয়ার আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষার্থী না বুঝে অংশ নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে, শিকার হয়েছে নিপীড়নের। আমরা ছাত্রীদের বলেছি—যেহেতু কলেজ বন্ধ, বাইরে ঘোরাঘুরি না করে রুমে থেকে শরীর-স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে। বেশি ভালো হয় বাড়ি চলে গেলে। সবাইকে নিরাপদে, সুস্থ থাকতে হবে—এটাই জানিয়েছি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন মামলার আসামি খুঁজতেই পুলিশ এসব হোস্টেলে গেছে— এমন কথা জানিয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালীউদ্দীন আকবর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আসামি খুঁজতে অভিযান পরিচালনা করেছি। এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।’
আইএমই/ডিজে