আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসার দখল নিতে ভাইপো ছাত্রলীগ নেতার পক্ষ হয়ে এক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার নেতৃত্বে। ওই হামলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার দিনই ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বিএনপির আনন্দ মিছিল থেকে ওই হামলা চালানো হয়। নগরীর ইপিজেড এলাকার মাদ্রাজি রোডে মো. মিজানুর রহমানের ‘নেট স্যাটেলাইট’ নামের একটি ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই হামলায় নেতৃত্ব দেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মঈন উদ্দীন (৩৫) এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা নাঈম শাহ ও আবরার সামি। নাঈম শাহ মঈন উদ্দীনের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বাদি হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন—নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মঈন উদ্দীন (৩৫), ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা নাঈম শাহ (২৮), মো. আবরার সামি (২৪), ৪০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মো. নাদিম (২৮), ইপিজেড থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোজাদ বারেক (৪০), মো. পলাশ (৩২), মো. শাহেদ (৩২), আবদুর রহমান রাজু (২৪) ও মো.তাহের (৩৫)।
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার পতনের দিন বরাবরের মতো আমি আমার অফিসে বসে ছিলাম। তখন বিএনপির একটি আনন্দ মিছিল অফিসের সামনে আসার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মঈন অফিসে ঢুকে লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করতে শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজে তা স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে। অন্যরাও তখন অফিস ভাঙচুরে যোগ দেয়।’
হামলার ঘটনায় অফিস ভাঙচুর ছাড়াও গ্রাহকের কাছ থেকে তোলা বিল বাবদ সাড়ে চার লাখ টাকাও নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলেন মিজান।
মিজানের অফিসে হামলার বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত মঈন বলেন, ‘আমি গেছি, কিন্তু তার আগে ওরাও আমার বাসা ও দোকান ভাঙচুর করে।’
তার স্বপক্ষে দুটি সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ দেখান মঈন। তবে মঈনের দেওয়া ফুটেজে দেখা গেছে, মঈনের দোকানে হামলার সময় ছিল ৫ আগস্ট রাত ৮টা ১৮ মিনিটে। অপর দিকে মঈন মিজানের অফিসে হামলা চালায় সন্ধ্যা ৭টা ২৬ মিনিটে।
ব্যবসার দখল নিতেই হামলা
গত ১০ বছর ধরে সরকারি নিবন্ধন নিয়ে ইপিজেড ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করছেন মিজান। বর্তমানে হাজারের কাছাকাছি গ্রাহক রয়েছে তার। অপরদিকে কিছুদিন আগে একই ব্যবসা শুরু করেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনের ভাইপো ছাত্রলীগ নেতা নাঈম শাহ।
এদিকে মঈনের বাসায় ও দোকানে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী মিজান বলেন, ‘মঈন স্বেচ্ছাসেবক দল ও তার ভাই বিএনপি করে। তাদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক গ্রুপিং আছে। অপর একটি গ্রুপের লোকজনই মঈনের বাসায় হামলা করে। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, ‘আমি ঘটনাটি গতকাল (বুধবার) জেনেছি। ইতোমধ্যে আমরা ঘটনাটি কেন্দ্রকে অবহিত করেছি। আমাদের নির্দেশনা আছে, কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। দ্রুতই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএস/ডিজে