বিজয় মেলায় চারদিনের নিয়মিত আলোচনা সভার অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর স্মরণসভায় নওফেলপন্থী ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর হট্টগোলের জের ধরে উভয়পক্ষের কর্মীরা চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি করেছে।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ির আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে তৈরি অস্থায়ী বিজয় মেলার মঞ্চে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বিজয় মেলার মঞ্চে মহিউদ্দীন চৌধুরীর স্মরণসভা যৌথভাবে আয়োজন করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুচ ছালাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুলসহ সিনিয়র নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত হওয়ার আগেই নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল নাম ঘোষণার বিষয়ে মঞ্চে একে অপরের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় মঞ্চের নিচে উপস্থিত উভয়পক্ষের কর্মীরাও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়ার একর্যায়ে চেয়ার ছুঁড়তে থাকেন।
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দস্তগীর। এ সময় ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় নেতারা বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু দস্তগীর অনুষ্ঠানের শেষের দিকে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর আগে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত বেলালকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় বেলাল ক্ষেপে যান। কারণ প্রথা অনুযায়ী সিনিয়রের আগে জুনিয়র নেতারা বক্তব্য দিয়ে থাকেন।’
ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘যখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেলাল ছাত্রলীগের দস্তগীরের কাছে এমন কাজের কৈফিয়ত চান, তখন দস্তগীর বেলালের আচরণে ক্ষুব্ধ হন। দস্তগীর বলেন, ‘আপনি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না’। মূলত তখনই দুই পক্ষের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।’
তবে ঘটনার বিষয়টিকে সংগঠনের ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যা’ বলে মনে করছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত বেলাল। এ ঘটনায় তিনি সংবাদ প্রকাশ না হোক—এমনটাই চান বলেও জানান।
কেন হঠাৎ এমন সংঘর্ষ হলো—এমন প্রশ্নের উত্তরে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি বেলাল বলেন, ‘সে ছোট ভাই, সে ভুল করেছে, আমরা বিষয়টি মীমাংসা করেছি। আমার পরে তো কখনোই ছাত্রলীগের সভাপতি বক্তব্য রাখতে পারে না। কিন্তু সে ইমুর আগে আমাকে বক্তব্য দিতে আহ্বান জানায়, যা সংগঠনের জ্যেষ্ঠতা ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ।’
কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও চেয়ার ছুঁড়ে মারার ঘটনার কথা স্বীকার করে বেলাল জানান, তিনি শুধুমাত্র একটি চেয়ার ছুঁড়ে মারার ঘটনা দেখেছেন। তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উভয়পক্ষের একাধিক নেতা চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়িতে অংশ নেন।
এ ঘটনায় কেউ আহত হননি বলে জানান আবুল হাসনাত বেলাল।
এদিকে বিজয় মেলার আলোচনা মঞ্চে উত্তেজনার মধ্যেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। তার উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা শান্ত হন। শিক্ষা উপমন্ত্রী তার বক্তব্যে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মহিউদ্দিন ভাইয়ের স্মরণসভায় ডেকোরাম মেনটেইন করা হয়নি। যাদের তাড়া ছিলো তারা আগে বক্তব্য দিয়ে চলে গেছেন। আজকের অনুষ্ঠানে কোনো গণ্ডগোল হয়নি।’
ভিডিও ফুটেজে গণ্ডগোলের চিত্র দেখা গেছে জানালে দস্তগীর বলেন, ‘ওটা সামান্য ভুল বোঝাবুঝি, ওটা অনুষ্ঠান শুরুর আগে হয়েছে। আজকে সুন্দর অনুষ্ঠান হয়েছে, বিশাল জমায়েত হয়েছে।’
বিএস/ডিজে