চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ‘সেশনজটে’ দায়ী নাছির ও নওফেল— বিস্ফোরক রাব্বানী

গ্রুপিংয়ে শেষ হয়ে হচ্ছে হাজারও কর্মীর শিক্ষাজীবন

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ‘সেশনজটের’ দায় সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ওপর চাপালেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় তিনি বললেন, আ জ ম নাছির ও নওফেল দুজনেরই আন্তরিকতার অভাবে এখানকার ছাত্ররাজনীতিতে এক ধরনের সেশনজট তৈরি হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার কর্মীর রাজনৈতিক ও শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে ব্যক্তি স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর কী হল— সেটা নিয়ে এই নেতাদের কেউ ‘কেয়ার’ করছেন না।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের একটি হোটেলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে এক মুখোমুখি আলাপচারিতায় গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দল নয়, প্রাধান্য পাচ্ছে ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থ।

দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়েও বেশি আবেগ নিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা রাজনীতি করেন, অথচ চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না— এমন মন্তব্য করে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। এখানে ছাত্রলীগ যারা করে, তারা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়েও অনেক বেশি আবেগ নিয়ে রাজনীতি করে। বছরের পর বছর ধরে তারা কোনো পদে না থেকেও বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে ছাত্ররাজনীতি করেন। কিন্তু আমরা আমাদের নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে তাদের সেই আবেগের মূল্য দিতে পারছি না।’

এজন্য কর্মীদের লাভ-ক্ষতি কেয়ার না করে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করার প্রবণতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘এখানে (চট্টগ্রামে) ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দেশের সবখানেই গ্রুপিং আছে। নেত্রীও বলেছেন ইতিবাচক রাজনীতির প্রতিযোগিতা থাকবে। ধরেন এখানে দুইটা গ্রুপ আছে— নওফেল ভাইয়ের গ্রুপ আর নাছির ভাইয়ের গ্রুপ। তো গ্রুপিংটা হবে এরকম— কে কার চেয়ে ভাল কাজ করতে পারে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি কোনো জায়গায় একটা গ্রুপের হয়ে গেছে। তো তারা আর চাইছে না কমিটি ভাঙ্গুক, যত বছর হয়ে যাক বা যেভাবে হয়ে যাক। এখানে হাজার হাজার নেতা কর্মীর কী হলো, সেটা নিয়ে কিন্তু কেউ কেয়ার করছে না।’

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সেশন জট চলছে। প্রত্যেকটা কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আপনি দেখেন মহসীন কলেজ, এমইএস কলেজ, সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ— এত নামকরা সব কলেজে দীর্ঘদিন কমিটি নাই। আপনি খবর নেন— দেখবেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। তাদের হতাশা বাড়ছে। একটা ছেলে রাজনীতিতে আসছে— তার ব্যক্তিজীবন, পরিবার, ক্যারিয়ার, লেখাপড়া সবকিছু তুচ্ছ জ্ঞান করে রাজনীতির আবেগ নিয়ে থাকে। তাদের (গ্রুপলিডারদের) এই ভ্রম কিন্তু হাজার হাজার ছেলেপেলের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে।’

আর চট্টগ্রামের রাজনীতির দুরবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা ছাড়াও সরাসরি নাছির-নওফেলকে দায়ী করে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এজন্য আমরা দায়ী। আমরা যারা নেতৃত্ব গিয়েছি কিংবা এখনও আছি… আমরা যারা সাইন করার ক্ষমতা রাখি তারা দায়ী। যারা সাইন করাকে ইনফ্লুয়েন্স করার ক্ষমতা রাখি তারাও দায়ী। এই যে কমিটি হচ্ছে না— অবশ্যই এজন্য নাছির ভাই দায়ী, এজন্য নওফেল ভাই দায়ী। কারণ তারা নেতৃত্বে আছেন। তারা চাইলে এমনটা হতো না। এমনকি আমিও এই দায় এড়াতে পারি না।’

কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যেটা বলেছি (কমিটি গঠনে টাকার লেনদেন) আমার মনে হয় ইতোমধ্যে সেটা প্রমাণিত যে, আমি সঠিক বলেছি ও সত্য বলেছি। তারা (চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) সেটা করেছে। যার অকাট্য দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। ওরাও আমার ছোট ভাই, ছাত্রলীগের সবাই তো আমার আপন। এখানে কারও প্রতি ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলা আমার মনে হয় সবারই উচিত।’

সম্প্রতি ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের কাজে চট্টগ্রাম আসেন গোলাম রাব্বানী। চট্টগ্রাম সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিবাচক মানবিক ও সামাজিক কাজের একটা সার্বজনীন প্ল্যাটফর্ম করেছি টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি) নামে। সারা দেশেই মানুষের নৈতিক ও যৌক্তিক প্রয়োজনে টিপিবি মানুষের পাশে থাকবে। আমরা গত ছয় মাস ধরেই কাজ করছি। টিপিবির হয়ে কিছু কাজ করতেই এবার চট্টগ্রামে এলাম।’

এটি কী ধরনের প্ল্যাটফর্ম— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ— মূলত একটা সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। খেয়াল করলে দেখবেন আমাদের দেশে দুই ধরনের মানুষ আছে। এক ধরনের হলো যাদের সাহায্য দরকার। আরেক ধরনের হলো যারা সাহায্য করতে চায়। এই যে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া নিয়েই আমরা বেশি কাজ করবো। আমরা সমস্যা খুঁজে বের করে সেটি সমাধানের জন্য দায়বদ্ধ সংস্থার নজরে এনে সেটি সমাধানের চেষ্টা করবো। আমরা নিজেরা কর্তৃপক্ষ হয়ে যাব— এমনটা আমাদের লক্ষ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই মেম্বার। আমিও মেম্বার। আমাদের এখানে এক লাখের ওপর মেম্বার আছে। আমি এর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছি। চট্টগ্রামের বর্তমান জেলা প্রশাসক ইলিয়াস ভাই— তিনি আমার এলাকার (মাদারীপুর) বড় ভাই। ভাল কাজ করার আগ্রহ, নিজের সদিচ্ছা ও কর্মদক্ষতায় উনি দেশের সেরা জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও আমাদের অ্যাডমিন প্যানেলের অন্যতম অ্যাডমিন। উনার পরামর্শ নিয়ে আমার বন্ধু জিয়াউদ্দিন হায়দার এখানকার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!