দীর্ঘ খরা কাটিয়ে অবশেষে বৃষ্টি ঝরেছে চট্টগ্রামের ২২টি চা বাগান এলাকায়। চা শ্রমিকদের জন্য বৃষ্টি হচ্ছে ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ। তাই এই আশীর্বাদের বৃষ্টিতে ‘বাম্পার’ চা চাষের আশা করছেন বাগান মালিক ও শ্রমিকরা।
প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে চা গাছের কাটিং হয়, উৎপাদন বন্ধ থাকে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে গাছে কুঁড়ি আসে, মার্চে পাতা উত্তোলন হয়। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বৃষ্টি হওয়া মানে চা উৎপাদন বাম্পার হওয়ার সম্ভাবনা।
সোমবার (২০ মার্চ) থেকে চট্টগ্রামের চা বাগানগুলো বৃষ্টির দেখা পেয়েছে। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় চা বাগানগুলো রীতিমতো খরায় মরছিল। অনেক চা বাগানে মড়ক ধরে বৃষ্টি না থাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বৃষ্টি ‘একটি পাতা দুটি কুঁড়ি’র রক্ষাকবচ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির রামগড়, আঁধার মানিক, নাছেহা, দাঁতমারা, নিউ দাঁতমারা, মা-জান, নেপচুন, পঞ্চবটি, মুহাম্মদ নগর, হালদাভ্যালী, এলাহী নুর, রাঙ্গাপানি, বারমাসিয়া, উদালীয়া, খৈয়াছড়া, আছিয়া, চৌধুরী ও কর্ণফুলী এবং বাশঁখালির চাঁদপুর বেলগাও, রাঙ্গুনিয়ার কোদালিয়া, আগুনীয়া, ঠান্ডাছড়িসহ মোট ২২টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলাতেই আছে ১৮টি।
এদিকে প্রতিবছর চা উৎপাদনের শুরুতে আশীর্বাদের বৃষ্টির জন্য চা শ্রমিকরা পালন করে গ্রাম পূজা। তাদের বিশ্বাস, গ্রামের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাল-ডাল নিয়ে পূজা-অর্চনা দিলে আকাশ থেকে আশীর্বাদ দেন ভাগ্যদেবী।
চা বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান, চা উৎপাদনের মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে বৃষ্টি হওয়াটা চা বাগানের জন্য বেশ উপকারী।যথাসময়ে এ বৃষ্টি হলে ওই বছর চায়ের উৎপাদন ভালো হয়। চা বাগানগুলোতে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা হয়।
উদলিয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাদের চা বাগানে সোমবারই (২০ মার্চ) ১ দশমিক ৩৫ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বারমাসিয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক নুর উদ্দিন মিলন জানান, তাদের চা বাগানে ২.০৮ ইঞ্চি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া হালদাভ্যালী চা বাগানে ১.৪৫ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে। নেপচুন চা বাগানে ১.৫ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চট্টগ্রামের সবকটি বাগানই বৃষ্টি পেয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবারে চায়ের রাজ্য সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটজুড়ে গড়ে ১ ইঞ্চি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ ব্যাপারে সিলেটের ক্লিফটন চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের আগেই সিলেটের চা বাগান গুলো ‘আশীর্বাদের বৃষ্টি’র দেখা পেয়েছে। প্রথম পর্যায়ে যে বৃষ্টি হয়েছে তা চায়ের জন্য যথেষ্ট। চট্টগ্রামেও বৃষ্টির কথা শুনেছি। চা বাগানের জন্য বৃষ্টি হলো প্রাণ। শুরুতে যত বেশি বৃষ্টি হবে, চায়ের উৎপাদন ততো বেশি হবে।
রাঙ্গাপানি চা বাগানের ব্যবস্থাপক উৎপল বড়ুয়া বলেন, দেশে জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বৈরী প্রভাবটা প্রথমেই চা বাগানের ওপর পড়েছে। কোনো কোনো চা বাগান বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই চা উৎপাদনের জন্য বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি মাটিক্ষয়সহ উর্বরতা ধ্বংস করে। ফলে বাগানের উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। অনিয়মিত বৃষ্টি বাগানের চা উৎপাদনে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
ডিজে