চট্টগ্রামে চালের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা, বন্যার দোষ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
চালের বেশিরভাগ মিলই বন্ধ চট্টগ্রামে
চট্টগ্রামে চালের বাজারে চলছে অস্থিরতা। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চালের দাম। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও পাইকারিতে ৫০ কেজি চালের বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ২ টাকা থেকে ৭ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে চাল।
চট্টগ্রামের মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যার কারণেই বেড়েছে চালের দাম। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামে। তাছাড়া চট্টগ্রামে প্রায় ৮০ শতাংশ চাল আসে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে। চট্টগ্রামে প্রায় মিলই এখন বন্ধ। এর মধ্যে কৃষকরা বেশি দাম ধরার জন্য ধান বাজারে ছাড়ছে না। কোয়ালিটি চালের দাম তাই আরেক ধাপ বেড়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে মিনিকেট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, জিরাশাইল ৬৭ থেকে ৬৯ টাকা আর পাইজাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বেশি। মোটা চাল স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা কেজি দরে।
দেশে বন্যার আগে অর্থাৎ গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের বাজারে সাধারণ মানের মোটা সিদ্ধ ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা দরে। কিন্তু এখন সেই চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। একইভাবে ২ হাজার ২০০ টাকার গুটি স্বর্ণা ২ হাজার ৬০০ টাকা, ২ হাজার ৫০০ টাকার নূরজাহান স্বর্ণা ২ হাজার ৮০০ এবং ৩ হাজার ২৫০ টাকার জিরাশাইল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রামের চালের আড়ৎ নগরীর পাহাড়তলী ও চাক্তাই এলাকায়। এর মধ্যে চাক্তাই এলাকায় কয়েকটি চাল কলও রয়েছে। দুই আড়ৎ থেকে চট্টগ্রামের অন্যান্য বাজারে চাল সরবরাহ করা হয়।
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রায় ৮০ শতাংশ চাল আসে চট্টগ্রামের বাইরে দিনাজপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বগুড়া থেকে। এসব জায়গায় এখন ধানের সরবরাহ কম। চট্টগ্রামে প্রায় মিলই এখন বন্ধ। ২০-২৫ শতাংশ মিল চালু আছে, তাও আবার ফিক্সড করা কিছু সময়ের জন্য। এর মধ্যে কৃষকরা বেশি দাম ধরার জন্য ধান বাজারে ছাড়ছে না। বিভিন্ন বন্যা বা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তো জানেন। এখন সরবরাহ নির্ভর করে ধানের ওপর। তবে এখন কিন্তু কোয়ালিটি চালের দাম আরেক ধাপ বেড়েছে, সব চাল না। সামনের দিকে দাম বাড়বে না।’
আগ্রাবাদের মোগলটুলী বাজারে গিয়ে কথা হয় বেলায়েত উল্লাহ নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই দেশের অবস্থা খারাপ, তার মধ্যে আমাদের প্রধান খাবার ভাতের চালও যদি কিনতে না পারি, আর খাবো কি বলেন? বাজার চড়া, তার মধ্যে অযুহাত দিচ্ছে, বন্যার জন্য নাকি দাম বাড়ছে। কে দেখবে এসব?’
আগ্রাবাদ চৌমুহনী বাজারের হোসেন অ্যান্ড আহসান’র স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে, তাই খুচরা বাজারেও বেড়েছে। আমাদের চালের দাম নির্ভর করে পাইকারি বাজারের চালের দামের ওপর। যে মূল্যে কিনে আনি তার মধ্যেই বেচাকেনা করি। গত চালানে স্বর্ণা কিনেছি বস্তাপ্রতি ২ হাজার টাকায়, আর এখন ২ হাজার ২০০ টাকা। আমাকে তো বাড়তি বেচতেই হবে।’
তবে খাতুনগঞ্জের মেসার্স ব্রাদার্স ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক রাসেল বলেন, ‘চট্টগ্রামের চাক্তাই বা পাহাড়তলীতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় না। দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, আশুগঞ্জের মিলগুলো থেকেই চাল আসে। ওখান থেকে যে দামে আমরা কিনি, তার থেকে সামান্য কিছু বাড়তি দামে বাজারে ছেড়ে দিই। আমরা বেশি দামে কিনলে, বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বস্তাপ্রতি ১০-২০ টাকার বেশি লাভ করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ও বন্যার জন্য হয়তো দাম বাড়ছে, তবে আরও ভাল বলতে পারবে মিল মালিকরা। আমরা তো কিনে আনি ওদের থেকে। আশুগঞ্জে পানি ওঠার কারণেও আমরা বেশি দামে চাল কিনেছি। পরিবহন খরচও অনেক বাড়তি দিতে হয়েছে। তবে চালের মজুদ আছে।’
চট্টগ্রামে চালের বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ কেন্দ্রের ওপর দায় চাপান। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়া বা কমার বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ কেন্দ্র থেকে নেবে। আমরা মনিটরিং করছি, সেক্ষেত্রে আমাদেরকে বিক্রেতারা ক্রয় রশিদও দেখিয়েছে।’
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির জন্য দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রতি কেজিতে বাড়েনি। যেহেতু চট্টগ্রামে চাল উৎপাদন হয় না, সরাসরি উত্তরবঙ্গ থেকে আনা হয়, তাই দাম বৃদ্ধিতে পরিবহন ব্যবস্থারও কিছুটা দায় রয়েছে।’
ডিজে