চট্টগ্রামে ঘরে বসেই মিলবে অস্ত্রের লাইসেন্স, সঙ্গে আরও তেরো
স্মার্ট আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বিতরণ হল জেলা প্রশাসনে
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আগ্নেয়াস্ত্রসহ সকল লাইসেন্স এলো এক ঠিকানায়। এখন আর সনাতনী পদ্ধতিতে লাইসেন্স করতে হবে না। স্মার্ট লাইসেন্স চালু হওয়ার কারণে এখন আর অফিসে এসে সেবা নিতে হবে না। অনলাইনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে লাইসেন্স করা যাবে।
স্মার্ট লাইসেন্সের আবেদন করতে হবে http://www.licence.gov.bd— এই ওয়েব ঠিকানায় লগইন করে। প্রাথমিকভাবে স্মার্ট কার্ড ফি ২ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে বাৎসরিক নবায়ন ফি ৪০০ টাকা। হারানো কিংবা নষ্ট হলে নতুন করে লাইসেন্স নিতে একহাজার টাকা ফি দিতে হয়। সকল ফি চট্টগ্রাম সোনালী ব্যাংক কোর্ট হিল শাখায় স্মার্ট লাইসেন্স সার্ভিস বুথে। ফি জমা দিতে হবে চলতি হিসাব নম্বর ১০০৭৪০২০০১১৬৫।
এভাবে আগ্নেয়াস্ত্রই শুধু নয়, আরও ১৩ ধরনের লাইসেন্স পাওয়া যাবে। এর মধ্যে লোহা ও স্টিলের সামগ্রী, সিমেন্ট লাইসেন্স, সকল প্রকার কাপড়, সুতা, মনিকার ও স্বর্ণকার, দুগ্ধ খাদ্য, সিগারেট, এসিড, ইটভাটা, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, স্ট্যাম্প ভেন্ডর লাইসেন্স। আবেদনকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, টিআইএন, মোবাইল নম্বর ও ট্রেড লাইসেন্সের কপি অনলাইনে জমা দিতে হবে।
জমা দেওয়া তথ্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রমিং ইন্টারফেসের মাধ্যমে পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। ভেরিফিকেশন রিপোর্ট সন্তোষজনক পাওয়া গেলে নির্ধারিত ফি প্রদানের মাধ্যমে লাইসেন্সের অনুমতি দেওয়া হবে। পরে আবেদনকারীর প্রয়োজনীয় বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের আইরিশ, ডিজিটাল স্বাক্ষর, ফটো জমা নেওয়া হবে। ওয়ানস্টপ সার্ভিসে পেপারলেস এই পদ্ধতিতে সকল কাগজপত্র যাচাই করার পর স্মার্ট লাইসেন্স দেওয়া হয়।
স্পেকট্রাম আইটি সলিউশনের কারিগরি সহায়তায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিজস্ব অর্থায়নে আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের জন্য এ স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড তৈরি করা হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্মার্ট লাইসেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।’ এতে প্রত্যেক গ্রাহকের একটি অনলাইন প্রোফাইল রাখা হয়েছে। কেউ যাতে লাইসেন্স নকল করতে না পারে সে জন্য অনিয়ম প্রতিরোধ করতে স্মার্টকার্ড লাইসেন্সটিতে ১৪ ধরনের নিরাপত্তা বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। লাইসেন্সের বিভিন্ন তথ্য তাৎক্ষণিক যাচাই করার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস ও একটি বিশেষায়িত ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে লাইসেন্স গ্রহীতার এনআইডি নম্বর, লাইসেন্স নম্বর, আঙুলের ছাপসহ সাত ধরনের তথ্য ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করা যায়। কখনও কোনো লাইসেন্সধারীর স্মার্টকার্ড বিষয়ে সন্দেহ হলে শুধু তার ফিংগারপ্রিন্ট অথেনটিকেশনের মাধ্যমে লাইসেন্সের যথার্থতা যাচাই করা যাবে। স্মার্টফোনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে লাইসেন্সের বৈধতা যাচাই করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় স্মার্ট আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল গাফফার খান বলেন, আগ্নয়াস্ত্রের সঠিক ব্যবহার ও তদারকির জন্য স্মার্ট লাইসেন্স পদ্ধতি চমৎকার একটি উদ্যোগ। আগ্নেয়াস্ত্র মানুষের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। তবে তার সঠিক ব্যবহার ও নিয়মিত লাইসেন্স নবায়নে স্মার্ট লাইসেন্স প্রোগ্রাম সফলতা বয়ে আনবে।
এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. আবদুল মান্নান বলেন, সরকার ধারাবাহিকভাবে সব কিছু ডিজিটাল করে যাচ্ছে। ডিজিটাল সেবায় মানুষের হয়রানি ও দুর্নীতি রোধ হয়। স্মার্ট লাইসেন্স একটি সুন্দর ও সহজ নিয়ম। যে পদ্ধতিতে মানুষ ঘরে বসে সেবা নিতে পারেন।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ই গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় সরকারি সেবা প্রদানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন স্মার্ট লাইসেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ফর ডিসি অফিস প্রবর্তন করেছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস পদ্ধতিতে আবেদন করে দাপ্তরিক কাজ শেষ হওয়ার পর লাইসেন্স পাওয়া যাবে। দ্রুত ও সহজ পদ্ধতিতে দেওয়া এই লাইসেন্স নষ্ট হওয়ার ভয় নেই।
পরে আবদুল গাফফার খান আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীদের মাঝে স্মার্ট আগ্নেয়াস্ত্র কার্ড বিতরণ এবং আগ্নেয়াস্ত্র শাখা পরিদর্শন করেন।
সিএম/সিপি