চট্টগ্রামে গুলি-ইয়াবায় লোক ফাঁসানোর চক্রে ভিসির ড্রাইভার ও কথিত সাংবাদিকের বড় চক্র

চুল গজানোর দোকানে সোফার নিচে গুলি-ইয়াবা রেখে যায় অচেনা যুবক

চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে গুলি ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন। এদের মধ্যে দুজন নিজেদের ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়েছেন। অন্য একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়িচালক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুলি ও ইয়াবা দিয়ে ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টার এই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন সড়কে ‘হেয়ার এন্ড ফেয়ার’ নামের এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানে মাথার টাকে চুল গজানোর কথিত চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় হেয়ার এন্ড ফেয়ারের মালিক মো. মান্নান শেখকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে সিএমপির ডিবি পুলিশের সোর্সকেও ব্যবহার করে তারা।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন আনোয়ারা থানাধীন তৈলারদ্বীপ এলাকার এনামুল করিম চৌধুরীর ছেলে ইফতেখার করিম চৌধুরী (৪৮), কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন মালিকা এলাকার আবদুল আলীমের ছেলে মো. সোহেল (২৬), নেত্রকোনা জেলার সদর থানাধীন মুন্সিবাড়ি এলাকার মৃত ফজলুল করিমের ছেলে মো. ফয়সাল (২০), কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানাধীন বসন্তপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম (৪২) ও চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানাধীন বিতারা এলাকার মো. বেলাল হোসেনের ছেলে মো. জামাল হোসেন (৪১)।

এদের মধ্যে ইফতেখার করিম চৌধুরী নিজেকে দৈনিক মুক্ত খবরের সাংবাদিক ও চট্টগ্রামের একটি প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের আত্মীয় এবং নজরুল ইসলাম নিজেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দেন।

চট্টগ্রামে গুলি-ইয়াবায় লোক ফাঁসানোর চক্রে ভিসির ড্রাইভার ও কথিত সাংবাদিকের বড় চক্র 1

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ আলী হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলশী থানাধীন নাসিরবাদ এমইএস কলেজের সামনে হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশের একটি টিম। সেখানে সোফার নিচ থেকে ইয়াবা ও গুলি উদ্ধার করে ডিবি। তবে সে সময় এই ঘটনা নিয়ে সন্দেহ হলে অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে ডিবি সদস্যরা।

তিনি বলেন, শনিবার আমাদের কাছে তথ্য আসে হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ার নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইয়াবা ও গুলি রয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেখানে অভিযান চালাই। তথ্য অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের সোফার নিচ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করি।

মুহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক ওই প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করি। সিসিটিভি ফুটেজে তখন সেখানে সোফায় বসা এক যুবককে সোফার নিচে ইয়াবা ও গুলি রাখতে দেখা যায়। সেখান থেকেই মো. ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত ইয়াবা ও গুলি রাখার পর ফয়সাল সেখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল যাতে কেউ সেগুলো সরাতে না পারে।

মুহাম্মদ আলী হোসেন আরও বলেন, ‘আটকের পর ফয়সাল জানায় ৫০০ টাকার বিনিময়ে সোহেল তাকে ইয়াবাগুলো সেখানে রাখতে দিয়েছে। তখন আমরা টাইগারপাস থেকে সোহেলকে আটক করি। পরে সোহেলের দেওয়া তথ্যমতে রাতভর অভিযানে বাকিদের একের পর এক গ্রেপ্তার করি।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) শাহ মো. আবদুর রউফ শাহ মো. আবদুর রউফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেয়ার অ্যান্ড ফেয়ারের মালিক মো. মান্নান শেখকে ফাঁসানোর জন্য সেখানে ইয়াবা ও গুলি রেখেছে বলে স্বীকার করেছে। এই পুরো পরিকল্পনাটা এক্সিকিউট করেছে ইফতেখার করিম চৌধুরী। তবে তারা কী কারণে এটি করেছেন তা বলেননি। আমরা আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’

এই চেষ্টার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব একটা কারণ হতে পারে জানিয়ে এই চক্রান্তের শিকার মো. মান্নান শেখ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। তারা এটি করে থাকতে পারে। তবে যারা ফাঁসানোর চেষ্টার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের আগে থেকে চিনতাম না।’

হেয়ার এন্ড ফেয়ারে ইয়াবা ও বারুদ থাকার তথ্য নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কিভাবে পেয়েছিল এই প্রশ্নের জবাবে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ওসমান গণি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের খুব বিশ্বস্ত একজন সোর্স এই তথ্য দিয়েছেন। তাকে বিভ্রান্ত করে এই কাজে ব্যবহার করেছিল ইফতেখার। সে বিষয়টা জানতো না। পরে তার সহযোগিতায় মূল অপরাধীদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি আমরা।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!