চট্টগ্রামে গরিব মানুষ কম বন্দর থানায়, বেশি বান্দরবানের থানচিতে
পরিসংখ্যান ব্যুরোর দারিদ্র্যের মানচিত্রের তথ্য
সারা বাংলাদেশে উপজেলাভিত্তিক দারিদ্র্যের হার ও বৈষম্য সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছে বান্দরবানের থানচিতে (৭৭.৮ শতাংশ)। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বসবাস চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় (১.৫ শতাংশ)।
অন্যদিকে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরে গরিব মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও দ্বিতীয় অবস্থানেই রয়েছে বান্দরবানের থানচি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্যের মানচিত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। উপজেলাভিত্তিক দারিদ্র্যের হার বিশ্লেষণ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য হার গ্রুপে অবস্থানকারী উপজেলার সংখ্যায় বৈষম্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায় চট্টগ্রাম বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগে অতি নিম্ন দারিদ্র্য হারের উপজেলা যেমন রয়েছে, তেমনি অতি উচ্চ দরিদ্রপ্রবণ অঞ্চলও রয়েছে।
দেশে দরিদ্রপ্রবণ অঞ্চলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক বেশি দরিদ্র মানুষের হার কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরে। এই উপজেলায় ৭৯ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। এর পরেই সবচেয়ে বেশি ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র মানুষ রয়েছে বান্দরবানের থানচিতে।
বিশেষকরে পাহাড়ি অঞ্চলে দরিদ্র হার অনেক বেশি হওয়ায় আঞ্চলিক বৈষম্যও বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে। তবে বিভাগভিত্তিক সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস রংপুরে। এই বিভাগের ৪৭ ভাগ মানুষ দরিদ্র এবং বিভাগের অর্ধেকের বেশি অঞ্চলের মানুষ উচ্চ দরিদ্র রেখায় অবস্থান করছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তা বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্র ২০১৬ তৈরি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। দেশে সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এর চূড়ান্ত ফলাফল ২০১৯ সালে প্রকাশ করা হয়। এর পর দারিদ্র্যের মানচিত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বিবিএস ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, তখন দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। ২০১৬ সালের জরিপে তা কমে আসে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের বিবিএস এর ধারণাগত জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশের দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা করোনার প্রভাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেও সরকারিভাবে কোনো জরিপের তথ্য আর প্রকাশ করা হয়নি।
দেশের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য দিয়ে জেলাভিত্তিক দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হলেও এবার দারিদ্র্যের মানচিত্রে উপজেলা, থানাভিত্তিক দারিদ্র্যের তথ্য উঠে এসেছে। দেশের আঞ্চলিক বৈষম্য কোথায় কতটা প্রকট সে চিত্র উঠে এসেছে।
উপজেলা পর্যায়ে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে
দারিদ্র্যের মানচিত্রে গ্রুপভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে ১২ শতাংশের নিচে হলে অতি নিম্ন দারিদ্র্য হার, ১২ থেকে ২০ শতাংশ হলে নিম্ন দারিদ্র্য, ২০ থেকে ২৯ দশমিক ৩৬ হলে মধ্য দারিদ্র্য, এর ওপরে ৩৯ দশমিক ৬৬ পর্যন্ত উচ্চ দারিদ্র্য অঞ্চল এবং ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওপরে অবস্থান করছে এমন অঞ্চলকে অতি উচ্চ দারিদ্র্র অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিভাগভিত্তিক দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলা ও থানা বিশ্লেষণ করে দেখা চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বসবাস চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় (১.৫ শতাংশ) এবং সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ রয়েছে বান্দরবানের থানচিতে (৭৭.৮ শতাংশ)। খুলনা বিভাগে সবচেয়ে কম চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় (৭.৯ শতাংশ) এবং সবচেয়ে বেশি মাগুরার মোহাম্মদপুরে (৬২.৪ শতাংশ)। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে কম দরিদ্র গুলশান থানায় (০.৪ শতাংশ), সবচেয়ে বেশি দরিদ্র কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে (৬১.২ শতাংশ)। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দরিদ্র ভোলার দৌলতখানে (১২.২ শতাংশ), সবচেয়ে বেশি পটুয়াখালীর দশমিনায় (৫২.৮ শতাংশ)।
ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম দরিদ্র ভালুকায় (১৫.৫ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে (৬৩.২ শতাংশ)। রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে কম দরিদ্র বোয়ালিয়া থানায় (৯.০ শতাংশ) এবং সবচেয়ে বেশি নওগাঁর পোরশাতে (৪৮.৭ শতাংশ)। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে কম দরিদ্র পঞ্চগড়ের অটোয়ারীতে (৯.৩ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরে (৭৯.৮ শতাংশ)। সিলেট বিভাগের সবচেয়ে কম দরিদ্র বিশ্বনাথে (১০.৪ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের অবস্থান সুনামগঞ্জের শাল্লায় (৬০.৯ শতাংশ)।
এতে দেখা যায়, অতি নিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোনো উপজেলা নেই। রংপুর বিভাগে অতি নিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে অবস্থানকারী উপজেলা শুধু একটি। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে অতি উচ্চ দারিদ্র্য হার গ্রুপে অবস্থানকারী উপজেলা রয়েছে মাত্র একটি। যদিও ঢাকা বিভাগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৭৭টি উপজেলা/মেট্রো থানা রয়েছে অতি নিম্ন দারিদ্র্য হার গ্রুপে। একই সঙ্গে ঢাকা বিভাগে ১২টি উপজেলা রয়েছে অতি উচ্চ দারিদ্র্য হার গ্রুপে।
সিপি