চট্টগ্রামে খুনে মেজাজের করোনা দুর্বল হচ্ছে ধীরে

উপসর্গের ধরনেও বদল এসেছে

চট্টগ্রামে করোনার খুনে রূপ খানিকটা পরিবর্তন হচ্ছে। সংক্রমণের হার যেমন কিছুটা কমেছে, তেমনি সংক্রমিতদের মধ্যে উপসর্গের ধরনেও আসছে ইতিবাচক পরিবর্তন। পরিবর্তনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা একমত হলেও এর কারণ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না তারা। তবে তুলনামূলকভাবে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতিতে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে এই বিষয়ে দ্বিমত নেই কারও। তবে পাশাপাশি আছে শঙ্কাও। সামনেই কোরবানির ঈদ। এ সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

জুনের পুরো সময়ে যেখানে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে রীতিমত চিকিৎসা পাওয়ার হাহাকার দেখা গেছে, হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকার কারণ দেখিয়ে একের পর এক রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে— সেই চিত্রেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে গত কয়েক দিনে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাপ্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। শুধু তাই নয় চিকিৎসা নিতে যারা আসছেন তাদের মধ্যে জটিল উপসর্গের রোগী খুব একটা বেশি নেই। ফলে কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা। এমনকি টেলিমেডিসিন সেবা নিতেও যে পরিমাণ ফোন আগে আসতো তার সংখ্যাও কমেছে ব্যাপকহারে।

জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। রোগীদের ভিড় কমেছে হাসপাতালে। কিছুদিন আগেও আমরা রোগী জায়গা দিতে পারছিলাম না। জটিল উপসর্গের রোগীর সংখ্যাও কমেছে অনেক। এমনকি টেলিফোনে সেবা নিতেও অনেকে কল করেন। সেই সংখ্যাটাও কমেছে বেশ কয়েকদিন ধরে।’

বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন— এই প্রশ্নের জবারে ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘এই মুহূর্তে আসলে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলার সুযোগ নেই। শুধু এটুকুই বলতে পারি সবমিলিয়ে করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে একটা দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে। হয়তো আইসোলেশন সেন্টার করে প্রাথমিকভাবে অনেককে চিকিৎসা দেওয়ার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটাও একটা কারণ হতে পারে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতাও বাড়ছে।’

তবে শুধু খুনে মেজাজ নয়, বরং চট্টগ্রামে সংক্রমণের হারও কমেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘মাসখানেক আগেও যেখানে প্রতিদিন মোট নমুনা পরীক্ষার ৩০ শতাংশ পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছিল, গত কয়েকদিনে সেখানে ২০ শতাংশ পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ সংক্রমণের গতিও কমেছে।’

করোনা আক্রান্তের তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার বাড়তে থাকে ২৭ মে থেকে। সেদিন ৫৭৮ নমুনার মধ্যে ২১৫ জন করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন, শতকরা হিসেবে পজিটিভ হওয়ার হার ছিল ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। পরের দিন ৪৫৭ জনের নমুনায় ২২৯ জন পজিটিভ হয়, শতকরা হিসেবে পজিটিভ হওয়ার হার ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ— এখন পর্যন্ত একদিনের শতকরা হিসেবে যা সর্বোচ্চ। পরবর্তীতে ২৯ মে ৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ৩০ মে ২৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, ৩১ মে ৩০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ১ জুন ৩৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২ জুন ৩৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ৩ জুন ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ করোনা পজিটিভ হয়েছিল।

কিন্তু গত এক সপ্তাহে বিপরীতমুখী হয় এই চিত্র। গত ২৬ জুন ৮৯০ নমুনায় ১৫৯ করোনা পজিটিভ হয়েছে— শতকরা হিসেবে যা ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ২৭ জুন আক্রান্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২৮ জুন ৩৪ দশমিক ৭০, ২৯ জুন ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ৩০ জুন ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ১ জুলাই ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ২ জুলাই ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ৩ জুলাই ২১ দশমিক ২৭ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে করোনা পজিটিভ হিসেবে।

বিষয়টি ইতিবাচক হলেও সতর্কতা অবলম্বনে কোনো ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সন্দেহ নেই পজিটিভ একটা পরিবর্তন হচ্ছে। তবে আমাদের এই পরিবর্তনকে ধরে রাখার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। এ সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নিচ্ছি আমরা। সবাই এই বিষয়ে সচেতন হলে লড়াইটা আমাদের জন্য সহজ হবে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm