চট্টগ্রামে খণ্ডবিখণ্ড ৩৫ প্রতিমা, পুলিশের দাবি নিছক দুর্ঘটনা, মানতে নারাজ কারিগর

আর কদিন গেলেই সরস্বতী পুজো। রাত জেগে কাজ করছিলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর লালারহাটের প্রতিমা কারিগর বাসুদেব পাল। মধ্যরাতে অগ্রিম বায়নার প্রতিমার কাজ শেষ করে ঘুমোতে যান। কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙতেই তিনি যে দৃশ্যটা দেখলেন সেই সকাল কারিগর বাসুর ৪৫ বছরের জীবনে কখনও আসেনি।

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) ঘুম থেকে উঠেই বাসুদেব দেখেন, তার হাতের গড়া ৩৫টি সরস্বতী প্রতিমার খন্ড-বিখন্ড অবস্থা। রাতের অন্ধকারে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বায়না নেওয়া প্রায় সবগুলো প্রতিমাই গড়ার আগে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

চট্টগ্রামে খণ্ডবিখণ্ড ৩৫ প্রতিমা, পুলিশের দাবি নিছক দুর্ঘটনা, মানতে নারাজ কারিগর 1

এরকম ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পূর্ব শাকপুরার ঐতিহ্যবাহী লালার হাটে। শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতে বাসুদেব পালের প্রতিমা তৈরির কারখানাতে এই হামলাটি ঘটে। এতে সরস্বতীর প্রায় ৩৫টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে এবং মৃৎশিল্পী বাসুর প্রতিমা কারখানার সুরক্ষার জন্য দিনে একজন ও রাতে দুজন গ্রাম পাহারাদার ঠিক করে দিয়েছে বোয়ালখালী থানা পুলিশ।

এদিকে ঘটনাটিকে ‘নিছকই একটি দুর্ঘটনা’ মনে করছে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত রাস্তার পাশে ঘরটি হওয়ায় রাতে কোনো যানবাহন লেগে প্রতিমাগুলো ভেঙে যেতে পারে। কেউ ইচ্ছেকৃত ভেঙেছে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, ‘হয়তো ছোট ছেলেরা খেলার ছলে ভেঙেছে। তাছাড়া মূর্তিগুলো ভালো করে শুকায়নি।’

কিন্তু রাত ১২টার পর কিভাবে বাচ্চারা খেলতে আসবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি আব্দুল করিম বলেন, ‘তাহলে হয়তো ঘরের পাশে রাস্তা তো, তাই রাতে চলাচলের সময় কিছু লেগে হয়তো ভেঙ্গেছে। তবে বাকি ঘটনা তদন্ত শেষে বলতে পারবো।’

তবে পুলিশের এমন যুক্তি মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্থ মৃৎশিল্পী বাসুদেব। পুলিশের যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না রাস্তায় চলাচলের সময় কোন গাড়ি ধাক্কা দেবে বা কোনো বাচ্চা নষ্ট করবে। প্রতিমাগুলো যে ঘরের বারান্দায় রাখা হয়েছে ওই জায়গা থেকে রাস্তার দূরত্ব অন্তত ১৫-২০ হাত। তাই এমনটা হওয়া অসম্ভব।’

তবে ৩৫টি প্রতিমা ভাঙার চেয়েও তার ৪৫ বছরের ‘বিশ্বাস’ ভাঙাতে বেশি আহত হয়েছেন মৃৎশিল্পী বাসুদেব। তিনি বলেন, ‘আমরা পারিবারিক ঐতিহ্যগতভাবে এই প্রতিমাগড়ার কাজ করে আসছি। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে এই কাজ করছি। কখনও এমনটা হয়নি। আমাদের পাশে মুসলিম পাড়া। আমরা খুব মিলেমিশে থাকি। বিশ্বাস নিয়ে থাকি। কিন্তু এই ৪৫ বছরের বিশ্বাসটা ৩৫টা প্রতিমা ভাঙার বিশ্বাসের থেকে অনেক বেশি কষ্টদায়ক।’

জানা গেছে, গত ১৫০ বছর ধরে ওই এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছিলেন বাসু পালের পূর্বপুরুষরা। বাবা হরিপদ পালের মৃত্যুর পর এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন কারিগর বাসুদেব পাল। তাদের পারিবারিক ইতিহাসে কখনও এমন দুঃসময় আসেনি। এখন অগ্রিম বায়না করা প্রতিমাগুলো কিভাবে মেরামত করে দেবেন— সেই চিন্তাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাসুকে।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!