চট্টগ্রামে কোরবানির লেনদেন ৪ হাজার কোটি, পশু জবাই পটিয়ায় বেশি

বাড়ছে স্থানীয় পশুর উৎপাদন

বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে প্রতি বছর বাড়ছে স্থানীয় পশুর উৎপাদন। এর সাথে প্রতি বছর কোরবানিতে বাড়ছে পশু জবাইয়ের সংখ্যা। একই সাথে বাড়ছে কোরবানি উপলক্ষে আর্থিক লেনদেন। এ বছরে কোরবানিতে জবাইকৃত পশুর মধ্যে প্রায় ৮৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ পশুই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। এছাড়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, কোরবানিতে জবাই হওয়া পশুর শতভাগই দেশে উৎপাদিত।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস চট্টগ্রাম থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম জেলায় পশু জবাই বেড়েছে দুই কোটি ২৮ লাখ ৬৪৫টি। অন্যদিকে পাঁচ বছরে স্থানীয় পশুর উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ২১৯টি। ২০১৯ সালে কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৭ লাখ ২০ হাজার ৮৯৫টি পশু জবাই হয়েছে।

এর আগের বছর ২০১৮ সালে জবাই হয়েছিল ৬ লাখ ৫৫ হাজার পশু। এছাড়া কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় ২০১৭ সালে মোট ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি, ২০১৬ সালে মোট ৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৬২টি এবং ২০১৫ সালে মোট ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু জবাই হয়েছে।

২০১৯ সালের কোরবানিতে জবাইকৃত পশুর মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। এর আগের বছর গত ২০১৮ সালের কোরবানিতে স্থানীয় পশুর উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। এছাড়া ২০১৭ সালের কোরবানিতে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি, ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি এবং ২০১৫ সালের কোরবানিতে স্থানীয় পশুর উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২০ হাজারটি।

২০১৯ সালের কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গবাদি পশু-মহিষ বেচাকেনায় লেনদেন হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা এবং ছাগল-ভেড়া কেনাবেচায় লেনদেন হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় গাভী-বকনা জবাই হয়েছে ৪৮ হাজার ৯৩৯টি, ষাঁড়-বলদ ৪ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৮টি, মহিষ ৩ হাজার ৪৩৫টি, ছাগল ২ লাখ ১ হাজার ২৬৯টি, ভেড়া ২৪ হাজার ৭৬৫টি এবং অন্যান্য পশু জবাই হয়েছে তিনটি।

২০১৯ সালের কোরবানীতে পটিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৭২ হাজার ২৩৫টি পশু জবাই হয়েছে। অন্যদিকে কর্ণফুলী উপজেলায় সবচেয়ে কম ২৪ হাজার ৬৬৫টি পশু জবাই হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের কোরবানিতে মিরসরাই উপজেলায় ৪১ হাজার ৮৯টি, সীতাকুণ্ডে ৩০ হাজার ২৬৮টি, সন্দ্বীপে ৩৫ হাজার ৫৩২টি, হাটহাজারীতে ৩৮ হাজার ৮৩৭টি, ফটিকছড়িতে ৬৩ হাজার ৩৪৫টি, রাউজানে ৪৯ হাজার ৫৮৪টি, রাঙ্গুনিয়াতে ৩৩ হাজার ৮৬৪টি, বোয়ালখালীতে ৩৪ হাজার ৭৮১টি, চন্দনাইশে ২৬ হাজার ৩৯১টি, সাতকানিয়ায় ৩৯ হাজার ৩০৯টি, লোহাগাড়ায় ২৫ হাজার ২০৮টি, আনোয়ারায় ৩৫ হাজার ৬৪৫টি, বাঁশখালীতে ২৫ হাজার ৩১৮টি, কোতোয়ালী মেট্রোতে ৩৫ হাজার ৮৩৮টি, ডবলমুরিং মেট্রোতে ৬২ হাজার ৯৬৩টি এবং পাঁচলাইশ মেট্রোতে ৪৫ হাজার ৯১৭টি পশু জবাই হয়েছে।

এদিকে, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম জেলায় কোরবানীর হাটে উঠা প্রায় ৫৩ লাখ ১৫১টি গবাদিপশু অবিক্রিত থেকে গেছে। এর মধ্যে অবিক্রিত গরু-মহিষের সংখ্যা ৩৫ হাজার ২৮৩টি এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৬৮টি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে আমাদের অর্জন ভালো। আমরা আরো উন্নতির দিকে যাচ্ছি। পশু লালন-পালন পদ্ধতি স্বাস্থ্যবান্ধব হয়েছে এবং কোরবানীর পশু মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েডমুক্ত ছিল। এছাড়া কোরবানিতে জবাইকৃত শতভাগ গরুই দেশি। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা থাকতে পারে, যা আমরা গণনায় আনিনি। আমরা সবাইকে নিয়ে এ অর্জন অব্যাহত রাখতে পারি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!