চট্টগ্রামে কারখানা গড়তে চায় নামি ব্র্যান্ড রয়েল এনফিল্ড

মার্চের মধ্যেই চায় মোটরবাইকের সিসি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে কারখানা গড়তে চায় যুক্তরাজ্যের নামি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড রয়েল এনফিল্ড। বাংলাদেশের ইফাদ অটোসের সঙ্গে রয়েল এনফিল্ড ইতিমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই করেছে। চুক্তির আওতায় মে মাসের মধ্যে রয়েল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল দেশের বাজারে ছাড়তে চায় ইফাদ।

জানা গেছে, রয়েল এনফিল্ড চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ময়মনসিংহের ভালুকায় এই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের কারখানা করতে চায়। মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ইতিমধ্যে ৩০ একর জমি নিয়েছে ইফাদ। তবে কারখানা গড়া সম্ভব হবে যদি আগামী মার্চের মধ্যে মোটরসাইকেলের সিসি (ইঞ্জিনক্ষমতা) বাড়ানো হয়।

প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশে ১৬৫ সিসির ওপর মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ার সুযোগ নেই। তবে সম্প্রতি এই বিধি সংশোধন করতে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মোটরসাইকেলের স্থানীয় বাজারের দীর্ঘদিনের এই চাওয়া পূরণে এবার সাড়া দিতে চলেছে সরকার। এর ফলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ১৬৫ সিসি থেকে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেলের অনুমতি দেওয়ার জন্য দুই চাকার ইঞ্জিনের ওপর যে বিধিনিষেধ রয়েছে, সেটি তোলার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল সরকারের সম্মতি পেলে বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশে মোটরবাইকের ওপর ইঞ্জিন ধারণক্ষমতা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কিন্তু এরপর সরকার হঠাৎ করেই মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের ধারণক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে দেয় ১৫০ সিসি পর্যন্ত। তখন এ নিয়ে যুক্তি দেখানো হয় যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের ধাওয়া করে তাদের শক্তিশালী দ্রুত মোটরসাইকেলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। যদিও এরকম কোনো উদাহরণ দেখাও যায়নি।

ভারতে রয়েল এনফিল্ডের একটি কারখানা
ভারতে রয়েল এনফিল্ডের একটি কারখানা

মোটরসাইকেল উৎপাদনের অগ্রদূত রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড প্রায় তিন বছর আগে নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করে এবং এখন অন্যান্য দেশেও রপ্তানির বাজার খুঁজছে। তবে যেহেতু ইঞ্জিনের ক্ষমতার একটি বিধিনিষেধ রয়েছে, তাই কোম্পানিটি বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য ২০০ সিসি মোটরসাইকেলের পরীক্ষা চালাতে পারে না।

বাংলাদেশ মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, তার এসোসিয়েশন সরকারকে অনুরোধ করেছে ইঞ্জিন ধারণক্ষমতার সীমা পুনর্বিবেচনা করতে। নইলে এই শিল্পের সম্ভাবনা অচিরেই হারিয়ে যাবে।

রানার কয়েক বছর ধরে আমেরিকান ব্র্যান্ড ইউনাইটেড মোটরসের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু কোম্পানিটি শুধুমাত্র কম ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন উৎপাদন ও রপ্তানি করার অনুমতিই পেয়েছে। ইউনাইটেড মোটরস রানারকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল বানাতে দিতে সম্মত হয়নি, কারণ তারা স্থানীয় বাজারে প্রবেশাধিকার ছাড়া বিদেশের বাজারে তাদের পণ্যের সাফল্য নিয়ে সন্দিহান ছিল।

বাংলাদেশে সুজুকি মোটরসাইকেলের প্রস্তুতকারক র‌্যানকন মোটরবাইক লিমিটেড নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে চিঠি লিখেছে। সেটা যদি পুরোপুরি না হয়, তাহলে তারা এই অনুরোধও জানিয়েছে যেন অন্তত সিসি লিমিট বাড়ানো হয়, যাতে কোম্পানিটি রপ্তানির জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সুজুকি বাইক উৎপাদনে আরও বিনিয়োগ করতে পারে।

জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৯ সালের শেষের দিকে সরকারকে চিঠি লিখে জানায় যে তারা তাদের বিশ্ববিখ্যাত মোটরসাইকেল উৎপাদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু ইঞ্জিন ধারণক্ষমতার সীমা থাকায় কোম্পানিটি শঙ্কিত ছিল যে তাদের বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত সুফল দেবে না।

একই বার্তা দিয়েছে কাওয়াসাকির বাংলাদেশি ডিস্ট্রিবিউটর এশিয়ান মোটরবাইক লিমিটেডও।

ইফাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, সুযোগগুলো আমরা হারিয়ে ফেলছি। বিশ্বের সেরা কোম্পানি যেমন বিএমডব্লিউ এবং ডুকাটি বাংলাদেশের বাজার নিয়ে গবেষণা করছে। আমরা যদি তাদের স্বাগত জানাতে পারি তাহলে তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm