চট্টগ্রামে করোনার টিকা না পেয়েও ‘সার্টিফিকেট’ পাচ্ছেন অনেকে

দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় চট্টগ্রামের ১ লাখ মানুষ

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন মহিলা কলেজের শিক্ষক আবু হেনা মো. মহসিন করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন ৯ মার্চ। তার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার তারিখ ছিল ছিল ২০ মে। সেদিন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে টিকা দিতে লাইনেও দাঁড়ান তিনি। লাইনে দাড়ানো সকলের টিকার কার্ড নিয়ে তাতে ‘কমপ্লিটেড’ বা টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে সিলও মারা হয়। কিন্তু একপর্যায়ে টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় টিকা পাননি মহসীনসহ অনেকেই। তবে কিছুদিন পর কলেজশিক্ষক মহসীনের টিকার সনদও তৈরি হয়েছে— এমন এসএমএস চলে আসে তার মোবাইলে।

অন্যদিকে হালিশহরের ৭৪ বছর বয়সী জাহানারা আহমেদের কাছে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার কোনো বার্তাই আসেনি। তিনি প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ১৩ এপ্রিল। এরপর দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার তারিখ ছিল ১৬ জুন। কিন্তু টিকা নেওয়ার বার্তা না আসায় তিনি টিকা দিতে যাননি। অথচ তিনি টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন— ২২ জুলাই হঠাৎ করেই এমন বার্তা পান মোবাইলে। সেখানে জানানো হয়, তার টিকার সনদ তৈরি হয়ে গেছে।

শুধু কলেজশিক্ষক আবু হেনা মো. মহসীন কিংবা জাহানারা আহমেদই নন, প্রথম দফায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়া অনেকেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ না পেলেও তাদের ‘সনদ’ চলে এসেছে। ফলে তাদের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া নিয়ে অভূতপূর্ব সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ডোজের টিকার জন্য অপেক্ষায় আছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। এর মধ্যে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রায় আড়াই লাখ টিকা এসে পৌঁছেছে গত শনিবার (২৪ জুলাই)। সামনে দ্রুত সময়ে আরও বেশ কিছু টিকা আসবে। ফলে টিকার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষদের টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু টিকা না নিয়েও সনদ চলে আসায় অনেকের টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে নতুন সংশয় তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিলেও সমাধানের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি তাদের পক্ষ থেকে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে টিকাদান কেন্দ্রে গেলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভ্যাকসিন ইনচার্জ বলছেন, এই বিষয়ের সমাধান কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত তারা কিছু জানেন না। তবে এমন অভিযোগ তাদের নজরে আছে জানিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকায় যোগাযোগ করে এর সমাধান বের করার কথা জানালেন তারা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমন অভিযোগের কথা শুনেছি। এটা কোন টেকনিক্যাল ফল্টের কারণে হতে পারে। সংশ্লিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জের সাথে যোগাযোগ করলেই তিনি এটা সমাধান করতে পারবেন।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভ্যাকসিন ইনচার্জ আবু ছালেহ বলেন, ‘এটা তো পুরোটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে হচ্ছে ঢাকা থেকে। এখানে তো আমাদের কোনো হাত নেই। তবে অনেকেই এমন অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টা নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। উনারা যেভাবে এটা সমাধান করতে বলেন আমরা তাই করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!