চট্টগ্রামে করোনার অভিনব উপসর্গ— অক্সিজেন ঠিকঠাক থাকলেও কমে যাচ্ছে সোডিয়াম

নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট কিনা, সন্দেহে ডাক্তাররা

চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা ৭০ বছর বয়সী মহিউদ্দিন আহমেদ (ছদ্মনাম) করোনা পজিটিভ হওয়ার পর বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শুরুতেই কয়েক দফা তার বমি ও ডায়রিয়া হয়। রাতের বেলা হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে শুরু করে। একটু পর আবার ঠিক হয়ে যায়। এমন অস্বাভাবিকতা দেখে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা ১২৬ মিলিমোল-এ নেমে এলেও অক্সিজেন স্যাচুরেশন আছে স্বাভাবিকই।

প্রায় একই ঘটনা দেখা গেছে ৭৮ বছর বয়সী নাসিমা বেগমের (ছদ্মনাম) বেলায়ও। ৭ দিন ধরে জ্বর, ২ দিন ধরে তীব্র ডায়রিয়া, সঙ্গে বমি— এসবে ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করানোর দেখা যায়, নাসিমা বেগমের করোনা ও টাইফয়েড দুটোই এসেছে পজিটিভ। তার মধ্যে রেস্টলেস বা অস্থিরতা ছাড়াও ডেলেরিয়ামের উপসর্গ ছিল। ডেলিরিয়ামে রোগীর মানসিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। নাসিমা বেগমের শরীরের লবণের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা যায়, রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা ১১৬ মিলিমোল। কিন্তু তারও অক্সিজেনের মাত্রা ছিল স্বাভাবিক।

করোনাভাইরাসের ধরন কিভাবে বদলে যাচ্ছে— বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই দুটি ঘটনার কথা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. কামরুল আলম।

আগে যা কখনও দেখা যায়নি, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এবারে নতুন করে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে একইসঙ্গে আবার রোগীর ডায়রিয়া হচ্ছে। বমিও করছেন। এমন সব উপসর্গ দেখতে পাচ্ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রক্তের ঘনত্ব আসলে নির্ভর করে রক্তের সোডিয়ামের পরিমাণের ওপর। তাই রক্তে কোনো কারণে সোডিয়ামের মাত্রা এদিক-সেদিক হলে রক্তের ঘনত্ব পাল্টে যায়। রক্তে সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে প্রতি লিটারে ১৩৬-১৪৫ মিলিমোল। রক্তে সোডিয়াম কমে গেলে তাকে ‘হাইপোনেট্রেমিয়া’ বলা হয়। হাইপোনেট্রেমিয়ায় বমি ভাব, নিস্তেজ ভাব, দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে খিঁচুনি ও এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

একাধিক রোগীর মধ্যে এমন সিম্পটম বা উপসর্গ দেখায় ডা. কামরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোতেও ডায়রিয়া বা বমি হতো। কিন্তু বর্তমানে এই লক্ষণগুলো প্রকট আকারে দেখা যাচ্ছে। এটা হয়তো নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে হচ্ছে। তবে নিশ্চিত নই। যেহেতু এখন পর্যন্ত নতুন ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সও সেভাবে হয়নি।’

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট চট্টগ্রামে ছড়িয়েছে কিনা এটি এখনও সেভাবে জানা সম্ভব হয়নি— মন্তব্য করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি। আমাদের এখানে জিনোম সিকোয়েন্স করার সুবিধাটাও অত বেশি তো না। তবে আমরা রোগীদের উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দিচ্ছি।’

নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এসব রোগীকে কিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন— এই প্রশ্নের জবাবে ডা. কামরুল আলম বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দেই। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য নতুন কোনো গাইডলাইন আমরা এখনও পাইনি। নতুন যে রোগীগুলো পেয়েছি, তাদের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছি। পানিশূন্যতা দূর করতে আর লবণের ঘাটতি কাটাতে তাদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অলক নন্দী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে স্যালাইন খাওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বমি হলে তখন আর স্যালাইন খেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। তখন রোগীকে সুঁইয়ের মাধ্যমে স্যালাইন দিতে হবে। এক্ষেত্রে বমি হলেই টেস্ট করতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর এমনিতে পানিশূন্যতা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!