চট্টগ্রামে ডিসি হতাশ হয়ে বললেন, তিনিও তাদের ডাক্তারদের রাখার ব্যবস্থা করতে পারেননি এখনও!
প্রশাসনের আশ্বাস ও চোখরাঙানির পরও ডাক্তারদের আবাসন নিশ্চিত করতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতেই রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে করোনা আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোক্তাদের। যে ডাক্তাররা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনারোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন রাতদিন, তাদেরই একটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোথাও একটু জায়গা মিললে কদিন পরই তাদের ওই এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে গিয়ে অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করা হলে সেখানেও একই অবস্থা। এমনকি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেও ডাক্তারদের একটু মাথা গোঁজার ব্যবস্থা কোথাও করা যাচ্ছে না। করোনারোগীর চিকিৎসা দেওয়াটাই কি তাহলে অপরাধ হয়ে গেল— এমন প্রশ্ন ও যুগপৎ বিস্ময় সংশ্লিষ্টদের মুখে।
প্রথম দিকে মাত্র ১০ দিন নগরীর একটি স্কুলে আইসোলেশন সেন্টারের চিকিৎসকদের রাখার ব্যবস্থা করা গেলেও গত কিছুদিন ধরে রীতিমতো মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারছেন না করোনা হালিশহরে অবস্থিত আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা।
করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের অন্যতম উদ্যোক্তা সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতকাল (৩০ জুন) সারাদিন কেটেছে ডাক্তারদের জন্য বাসা খুঁজতে। শুরু থেকে ডাক্তারদের জন্য বাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আশেপাশের বিল্ডিং থেকে শুরু করে পুরো হালিশহর এলাকায় কোথাও ডাক্তারের নাম শুনলে বাসা ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছে না কেউ। এমনকি আবাসিক হোটেলগুলোতেও।’
প্রথমে ১০ দিন একটি স্কুলে ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুরুতে কোথাও বাসা না পেয়ে আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন তৌহিদুল ইসলামের হালিশহরের একটা স্কুলের রুমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। ১০ দিন থাকার পর ওই ভবনের মূল মালিক তাদের বের করে দেন।’
প্রথম দফায় বিতাড়িত হওয়ার পর দামপাড়ার একটি স্কুলে ডাক্তারদের জন্য থাকার জায়গা ব্যবস্থা করা হলেও বিভিন্ন কারণে সেখান থেকেও তাদের সরিয়ে নিতে হয়। পরে হালিশহরে একটি কোচিং সেন্টারে ডাক্তারদের থাকার আয়োজন করতে গিয়ে ভবন মালিকের বাধায় সেটাও সম্ভব হয়নি জানিয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা একটা কোচিং মালিকের সাথে কথা বলে তার বন্ধ কোচিং সেন্টারটি নিলাম এবং সেটার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করার সময় সেই ভবনের মূল মালিক পোর্ট কলোনি থেকে লোকজন নিয়ে এসে ঝগড়া শুরু করে দেয়। তাদের বক্তব্য করোনা রোগী দেখে— এমন কোনো ডাক্তার এখানে থাকতে পারবে না।’
তৃতীয় দফায় বিতাড়িত হয়ে সিএমপির এক পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় থাকার জায়গা ব্যবস্থা হলেও ঢাকা থেকে ডিএমপির আরেক অফিসারের ফোনে সেই পথও রুদ্ধ হয়ে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো উপায় না দেখে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুখ আহমেদের সাথে দেখা করে সব কিছু বলি। উনি শুনে সাথে সাথে নির্দেশ দেন হালিশহর থানা পুলিশকে। যারা এভাবে ডাক্তারদের বের করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি একটি থাকার জায়গারও ব্যবস্থা করে দিতে। হালিশহর থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ওই কোচিং সেন্টারে আবার যখন যাই, তখন সেই ভবনের মালিকের আত্মীয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা হালিশহর থানার ওসিকে ফোন করে নির্দেশ দেন বিল্ডিংটাতে কোনো ডাক্তারকে না রাখতে। অথচ পুরো ভবনটাতে কোচিং সেন্টার ছাড়া আর কিছু নেই।’
পরে হালিশহর থানা পুলিশের সহযোগিতায় অনেক কাটখড় পুড়িয়ে একটি আবাসিক হোটেলে একদিনের জন্য ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা করা গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর আবার সেকেন্ড অফিসার সহ বাসা খুঁজতে শুরু করি আমরা। প্রথমে দুদিনের জন্য আবাসিক হোটেলে রাখবো— এটা ভেবে একটা হোটেলে যাই এবং চারটা রুম বুকিং দিয়ে চলে আসি। রাত ১০টায় যখন ডাক্তাররাসহ সেখানে যাই, তখন ম্যানেজার জানায় পুলিশের জন্য ভেবে রুম ভাড়া দিয়েছেন তিনি। ডাক্তারদের রুম ভাড়া দেওয়ায় হোটেল মালিকের নিষেধ আছে। অনেক ঝামেলার পর তারা এক রাতের জন্য রুম ভাড়া দিতে রাজি হয়। ১ জুন দুপুর ২টা পর্যন্ত ওই হোটেলেই ছিলেন তারা।’
আপাতত কোনো সমাধান না পেয়ে ডাক্তারদের একটি পরিত্যক্ত ভবনে রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন একটানা খুঁজেও ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি। শেষে বাধ্য হয়ে হালিশহরে একটি পরিত্যক্ত ভবনে ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়েছে আমাদের। সেখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমরা নিরুপায়।’
এই সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনিও অনেকটা হতাশ হয়ে বলেছেন তাদের ডাক্তারদেরও রাখার ব্যবস্থা করতে পারেননি এখনও। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া উনারও কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।’
এআরটি/সিপি