চট্টগ্রামে এবার নালায় পড়ে শিশু উধাও, লাশের অপেক্ষায় বাবা

চট্টগ্রামে নালায় পড়ে এক শিশু নিখোঁজের পর দুদিন ধরে খোঁজাখুজি করছেন বাবা। কোনো হদিস না পেয়ে তার অপেক্ষায় নালার পাশেই অসহায় বসে আছেন তিনি, যদি উদ্ধারকারী দল অন্তত লাশটা হলেও খুঁজে দিতে পারে?

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে নগরের চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে ভূমি অফিসের সামনে চশমা খালে সাঁতার কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মো. কামাল (১৪)। খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছে।

নিখোঁজ কামাল ষোলশহর স্টেশনে এলাকার মো. কাউসারের ছেলে। তারা ষোলশহর স্টেশন এলাকায় ফুটপাতে থাকতেন। কামাল চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট।

জানা যায়, সোমবার বিকাল ৪টার দিকে নিখোঁজ কামাল ও তার বন্ধু রাকিবকে নিয়ে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীতে ভূমি অফিসের সামনে চশমা খালে সাঁতার কাটতে গিয়ে ময়লাযুক্ত পানিতে ভেসে যায়। ওই সময় পানির স্রোতে কামাল ভেসে গেলেও দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রাণে বেঁচে যায় তার বন্ধু রাকিব।

চট্টগ্রামে এবার নালায় পড়ে শিশু উধাও, লাশের অপেক্ষায় বাবা 1

নিখোঁজের পর রাকিব বিষয়টি তার বাবাকে জানালে কামালের বাবা ভয়ে কাউকে না জানিয়ে কয়েক দফা নিজে খোঁজাখুজি করেও পাননি। ছেলেকে হারিয়ে রাত পার হয়ে সকাল হলেও কাউকে জানাতে সাহস করেননি হতভাগা বাবা।

সকালেও খোঁজাখুজি করে না পেয়ে (৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের তিন ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। তবে এখনো শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।

প্রাণে বেঁচে যাওয়া রাকিব বলেন, আমি এবং কামাল গতকাল বিকালে চশমা খালে সাঁতার কাটতে গিয়ে ময়লা পানির মধ্যে ভেসে যায়। দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে আমি ওঠে দেখি কামাল নাই, তাকে দেখা যাচ্ছে না। সাথে সাথে আমি তার বাবাকে বিষয়টি জানায়।

নিখোঁজ শিশু কামালের বাবা কাউসার বলেন, আমার চার সন্তানের মধ্যে কামাল সবার ছোট। গতকাল তার বন্ধু রাকিবকে নিয়ে খেলতে বের হয়ে চশমা খালে পানিতে ভেসে যায়। আমি শুনার পর ভয়ে কাউকে বলি নাই। নিজে খোঁজ করেও আমার ছেলেকে আমি পায়নি। আজকে সকালেও না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে পত্রিকা বিক্রি করতো। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চার সন্তানকে নিয়ে ষোলশহর স্টেশনের ফুটপাতে থাকতাম। আমরা বাবা গরীব মানুষ। দিনে রোজগার করে দিনে খায়। আমি ভয়ে কাউকে বলি নাই। আমার ছেলেকে তো জীবিত পাবো না। অন্তত আমার ছেলের লাশটা আমি চাই।

বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার তানভির আহম্মেদ বলেন, কামাল নামে এক শিশু গতকাল বন্ধুকে সাথে নিয়ে সাঁতার কাটার সময় ময়লাযুক্ত পানির স্রোতে ভেসে যায়। তার মধ্যে প্রাণে বেঁচে যায় রাকিব। গতকাল নিখোঁজ হলেও আজ (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টার দিকে আমাদের খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে বায়েজিদ ও আগ্রাবাদের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করেছি। চশমা খালে ময়লা ও পানির স্রোত বেশি হওয়ায় উদ্ধার কাজে সমস্যা হচ্ছে। আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে ফোন দিয়েছি। ময়লাগুলো পরিষ্কার করা সম্ভব হলে উদ্ধার কাজ আমাদের জন্য সহজ হবে। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!